০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

মিশিগানে ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি!




রম্য

মিশিগানে ভোজ্য তেলের (ভেজিটেবল অয়েল, সয়াবিন, ক্যানোলা, কর্ন অয়েল) মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে বিশেষ করে বাঙালি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এসব তেলের ৩৫ পাউন্ডের টিনের দাম গত বছর ছিল ২৭ ডলার এখন এগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪৫ ডলারে বা তারও উচ্চ মূল্যে। মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে এ সপ্তাহের এক সকালে উদীয়মান সাংবাদিক, আমার ভাগ্নে বলটুকে দায়িত্ব দেই।

১৩ ফেব্রুয়ারি রোববার। তুষারপাতে বিপর্যস্ত বৃহত্তর ডেট্রয়েটের জনপদ। প্রচুর সড়ক দুর্ঘটনা, রাস্তা বন্ধসহ নানা সমস্যা উপেক্ষা করে বিকেল ৫টার মধ্যে তেলের মূল্য বৃদ্ধির ৫টি কারণ বলটুর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

১। করোনার কারণে তেল কোম্পানিগুলোতে শ্রমিকের অভাব
২। পরিবহন সমস্যা 
৩। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে শ্রমিকদের কাজে না ফেরা
৪। তেল উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন ও রাশিয়ায় প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন কম হওয়া
৫। তেল দেয়া বৃদ্ধি।

৫ নম্বরে ‘তেল দেয়া বৃদ্ধিতে’ একটা * স্টার চিহ্ন দিয়ে বলটু লিখেছে, এই তেল দেয়া বৃদ্ধি বলতে আমি যা বুঝিয়েছি তা জানতে হলে আপনাকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ প্রবন্ধটি পড়তে হবে। অনেক কষ্টে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ প্রবন্ধটি যোগাড় করে পড়ে আমার যে ধারণা হয়েছে, তাতে ‘তেল দেয়া’র সাথে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাইনি। তবে এটা ঠিক মিশিগানে ইদানীং ‘তেল দেয়া’র যেন একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ফেসবুকের কল্যাণে তা বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে। স্বার্থ সিদ্ধি, লাইম লাইটে আসা, পদ বাগানো, নিজে একটা কিছু প্রমাণ করাসহ ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য একশ্রেণীর মানুষ ‘তেল দেয়া’র অসম প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। যা খুবই দৃষ্টিকটু ও অভ্যবতা বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। একজন ‘তেল দেয়া’ বিশেজ্ঞের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “অকর্মণ্য, অযোগ্য লোকেরাই ‘তেল দেয়া’তে পারদর্শী। তারা মনে করে তাদের এই তেল দেয়াটা কেউ বুঝে না, কিন্তু যাকে দেয়া হচ্ছে তিনি যেমন বুঝেন অন্যরাও তেমনি বুঝেন। বুঝেন না শুধু যিনি তেল মর্দন করছেন। বিদ্যা, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, কর্ম, যোগ্যতার অভাবে এক শ্রেণীর মানুষ ‘তেল দেয়া’র অপবিদ্যা প্রয়োগ করেন। তেল দেয়ার ব্যাপারে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তার প্রবন্ধে কৌতুকের বাতাবরণে ও মানুষ যখন ব্যর্থ হয় তখন সে কি পন্থা অনুসরণ করে তার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন, চলুন আমরা তা দেখি।

“বাস্তবিকই তৈল সর্বশক্তিমান। যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যার অসাধ্য, যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের অসাধ্য, তাহা কেবল একমাত্র তৈল দ্ধারা সিদ্ধ হইতে পারে।” “তৈলের মহিমা অতি অপরূপ। তৈল নহিলে জগতের কোন কার্য সিদ্ধ হয় না।

তৈল নহিলে কল চলে না, প্রদীপ জ্বলে না, ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয় না, চেহারা খোলে না, হাজার গুণ থাকুক তাহার পরিচয় পাওয়া যায় না। তৈল থাকিলে তাহার কিছুরই অভাব থাকে না।”
“যে তৈল দিতে পারে সে সর্বশক্তিমান, কিন্তু তৈল দিলেই হয় না। দিবার পাত্র আছে, সময় আছে, কৌশল আছে।”

তৈল দ্বারা অগ্নি পর্যন্ত বশতাপন্ন হয়। অগ্নিতে অল্প তৈল দিয়া সমস্ত রাত্রি ঘরে আবদ্ধ রাখা যায়। কিন্তু সে তৈল মূর্তিমান।” কে যে তৈল দিবার পাত্র নয় তাহা বলা যায় না। পুঁটে তেলি হইতে লাট সাহেব পর্যন্ত সকলেই তৈল দিবার পাত্র। তৈল এমন জিনিস নয় যে নষ্ট হয়। একবার দিয়া রাখিলে নিশ্চয়ই কোন-না-কোন ফল ফলিবে। কিন্তু তথাপি যাহার নিকট উপস্থিত কাজ আদায় করিতে হইবে সেই তৈলনিষেকের প্রধান পাত্র। সময়-যে সময়েই হউক, তৈল দিয়া রাখিলেই কাজ হইবে। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে অল্প তৈলে অধিক কাজ হয়।”
Tag :
About Author Information

মিশিগানে ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি!

আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০২২



রম্য

মিশিগানে ভোজ্য তেলের (ভেজিটেবল অয়েল, সয়াবিন, ক্যানোলা, কর্ন অয়েল) মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে বিশেষ করে বাঙালি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এসব তেলের ৩৫ পাউন্ডের টিনের দাম গত বছর ছিল ২৭ ডলার এখন এগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪৫ ডলারে বা তারও উচ্চ মূল্যে। মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে এ সপ্তাহের এক সকালে উদীয়মান সাংবাদিক, আমার ভাগ্নে বলটুকে দায়িত্ব দেই।

১৩ ফেব্রুয়ারি রোববার। তুষারপাতে বিপর্যস্ত বৃহত্তর ডেট্রয়েটের জনপদ। প্রচুর সড়ক দুর্ঘটনা, রাস্তা বন্ধসহ নানা সমস্যা উপেক্ষা করে বিকেল ৫টার মধ্যে তেলের মূল্য বৃদ্ধির ৫টি কারণ বলটুর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

১। করোনার কারণে তেল কোম্পানিগুলোতে শ্রমিকের অভাব
২। পরিবহন সমস্যা 
৩। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে শ্রমিকদের কাজে না ফেরা
৪। তেল উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন ও রাশিয়ায় প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন কম হওয়া
৫। তেল দেয়া বৃদ্ধি।

৫ নম্বরে ‘তেল দেয়া বৃদ্ধিতে’ একটা * স্টার চিহ্ন দিয়ে বলটু লিখেছে, এই তেল দেয়া বৃদ্ধি বলতে আমি যা বুঝিয়েছি তা জানতে হলে আপনাকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ প্রবন্ধটি পড়তে হবে। অনেক কষ্টে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ প্রবন্ধটি যোগাড় করে পড়ে আমার যে ধারণা হয়েছে, তাতে ‘তেল দেয়া’র সাথে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাইনি। তবে এটা ঠিক মিশিগানে ইদানীং ‘তেল দেয়া’র যেন একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ফেসবুকের কল্যাণে তা বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে। স্বার্থ সিদ্ধি, লাইম লাইটে আসা, পদ বাগানো, নিজে একটা কিছু প্রমাণ করাসহ ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য একশ্রেণীর মানুষ ‘তেল দেয়া’র অসম প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। যা খুবই দৃষ্টিকটু ও অভ্যবতা বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। একজন ‘তেল দেয়া’ বিশেজ্ঞের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “অকর্মণ্য, অযোগ্য লোকেরাই ‘তেল দেয়া’তে পারদর্শী। তারা মনে করে তাদের এই তেল দেয়াটা কেউ বুঝে না, কিন্তু যাকে দেয়া হচ্ছে তিনি যেমন বুঝেন অন্যরাও তেমনি বুঝেন। বুঝেন না শুধু যিনি তেল মর্দন করছেন। বিদ্যা, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, কর্ম, যোগ্যতার অভাবে এক শ্রেণীর মানুষ ‘তেল দেয়া’র অপবিদ্যা প্রয়োগ করেন। তেল দেয়ার ব্যাপারে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তার প্রবন্ধে কৌতুকের বাতাবরণে ও মানুষ যখন ব্যর্থ হয় তখন সে কি পন্থা অনুসরণ করে তার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন, চলুন আমরা তা দেখি।

“বাস্তবিকই তৈল সর্বশক্তিমান। যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যার অসাধ্য, যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের অসাধ্য, তাহা কেবল একমাত্র তৈল দ্ধারা সিদ্ধ হইতে পারে।” “তৈলের মহিমা অতি অপরূপ। তৈল নহিলে জগতের কোন কার্য সিদ্ধ হয় না।

তৈল নহিলে কল চলে না, প্রদীপ জ্বলে না, ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয় না, চেহারা খোলে না, হাজার গুণ থাকুক তাহার পরিচয় পাওয়া যায় না। তৈল থাকিলে তাহার কিছুরই অভাব থাকে না।”
“যে তৈল দিতে পারে সে সর্বশক্তিমান, কিন্তু তৈল দিলেই হয় না। দিবার পাত্র আছে, সময় আছে, কৌশল আছে।”

তৈল দ্বারা অগ্নি পর্যন্ত বশতাপন্ন হয়। অগ্নিতে অল্প তৈল দিয়া সমস্ত রাত্রি ঘরে আবদ্ধ রাখা যায়। কিন্তু সে তৈল মূর্তিমান।” কে যে তৈল দিবার পাত্র নয় তাহা বলা যায় না। পুঁটে তেলি হইতে লাট সাহেব পর্যন্ত সকলেই তৈল দিবার পাত্র। তৈল এমন জিনিস নয় যে নষ্ট হয়। একবার দিয়া রাখিলে নিশ্চয়ই কোন-না-কোন ফল ফলিবে। কিন্তু তথাপি যাহার নিকট উপস্থিত কাজ আদায় করিতে হইবে সেই তৈলনিষেকের প্রধান পাত্র। সময়-যে সময়েই হউক, তৈল দিয়া রাখিলেই কাজ হইবে। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে অল্প তৈলে অধিক কাজ হয়।”