আগামী ২২ জানুয়ারী অযোধ্যায় বিতর্কিত রাম মন্দির এর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ দিনই গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে খবরে প্রকাশ। এ নিয়ে বিজেপি এবং বিজেপি পন্থী পত্রিকা, সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও মন্দিরের কাজ এখনো শেষ হয়নি। মন্দির পুরোপুরি তৈরি হতে এখনো আরো দুই বছর লাগবে।
ভারতেরর চার শঙ্করাচার্যের কেউই ২২ জানুয়ারি অযোধ্যা যাবেন না। কারণ, তাঁরা মনে করছেন ওই দিন অযোধ্যায় যা হতে চলেছে, তা সনাতন ধর্মবিরোধী। পুরী গোবর্ধনপীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী জানিয়েছেন, তিনি অযোধ্যার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। উত্তরাখন্ডের জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী জানান, দেশের চার পীঠের চার শঙ্করাচার্যই ঠিক করেছেন ওই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার। হরিদ্বারে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় সনাতন ধর্মের লঙ্ঘন হতে চলেছে। চার শঙ্করাচার্যের কেউই সেখানে উপস্থিত থাকবেন না। তিনি বলেন, মন্দির তৈরি হওয়ার পরই বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অযোধ্যায় মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। অথচ রাম মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। এটা সনাতন ধর্মবিরোধী কাজ।

এদিকে এই উদ্বোধনী অনুষ্টানে যাচ্ছেন না কংগ্রেস দলের নেতারা। কারণ তাদের আমলেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল। তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল তারা। তারাও এর প্রতিরোধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। তারাও এ থেকে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল। তাই তারা আর পাপের ভাগীদার হতে চান না। চান না ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের গায়ে আরো আচর লাগুক। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যাদের নেতৃত্বে অর্থাৎ লালকৃষ্ণ আদভানী, মুরলি মনোহর জোশী, উমা ভারতীসহ
বিজেপির যে নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে মসজিদ ভাঙ্গা হয়েছিল তাদের কেউই এখন আর আলোচনার পাদপ্রদীপে নেই। আলোচনায় আছেন শুধু একজনই এবং একমাত্র তিনিই।

আর তিনি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মন্দিরের গর্ভগৃহে মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন মোদী। ইতিমধ্যেই তিনি ব্রত পালন শুরু করেছেন, মানুষের মূলত ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তিনি প্রায় প্রতি দিনই এই মন্দির নিয়ে কিছু বলছেন নয়তো করছেন। কারণ সামনে লোকসভা নির্বাচন। বিজেপির ভোটারদের প্রতি একটি প্রতিশ্রুতি ছিল রাম মন্দির নির্মাণ। রাম মন্দিরকে বিজেপি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করে চলেছে। অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন বিজেপির রাজনৈতিক কার্যক্রমের একটি অংশ। রাম মন্দিরের দীর্ঘ আন্দোলনের রথে গেরুয়া শিবিরের অনেকেই ছিলেন। ছিলেন না মোদি। সেসময় সবচেয়ে বেশী যে নামটি উচ্চারিত হয়েছিল তিনি হচ্ছেন লাল কৃষ্ণ আদভানী কিন্তু এই বর্তমান সময়ে তার নাম তেমন উচ্চারিত হচ্ছে না যদিও তার দেখানো পথেই হাটছে বিজেপি। বিজেপির প্রবীণ নেতৃবৃন্দ আজ কোণঠাসা। সব আলো যেন বিচ্ছুরিত হচ্ছে মোদীকে কেন্দ্র করে, তিনিই আলোকিত হবেন রাম মন্দিরে প্রতিষ্ঠিতব্য রামলালার মূর্তির আলোয়।

এ মন্দিরের ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি খেলে চলছে রাজনীতির বিভিন্ন ছক। তার একটি হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের প্রতিটি বুথে রাম মন্দিরের আবেগ পৌঁছে দেয়া। গেরুয়া শিবির থেকে প্রতিটি বুথ থেকে একজন করে রাম মন্দিরে নেয়া হবে। ফেরত ওই ব্যক্তি রাম মন্দিরের ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে মন্দির সংক্রান্ত প্রচার ও ভোটের প্রচার করবে। সকল শ্রেনীর, সকল পেশার লোকজনকে মন্দির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে বিজেপি তার সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাবরি মসজিদ রাম জন্মভূমি মামলায় মুসলিম পক্ষের প্রধান মামলাকারীদের একজন ইকবাল আনসারি, তাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্টানে
উপস্থিত থাকার জন্য। অর্থাত বিজিপি সব কার্ডই খেলছে।
এদিকে বহুত্ববাদী, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার দেশ ভারতে ধর্মকে
রাজনীতিকরনের যে ঘৃণ্য চর্চা বিজেপি শুরু করেছে তার প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, সমাবেশ, বিক্ষোভ অনুষ্টিত হচ্ছে। ভারতে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পথে নামার সিদ্ধান্ত নিলেন কলকাতার বিশিষ্টজনেরা।
মন্দির উদ্বোধনের দিন কলকাতার বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সভা করবেন বলে জানান উদ্যাক্তারা। বামপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মীরা গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের জানান, তারা আগামী ২০ জানুয়ারী রানুছায়া মঞ্চে সংবিধান, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার্থে সরব হবেন। গতকাল সোমবার ফ্যাসিবাদ বিরোধী মহাসম্মেলনের পক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অবস্থা জরুরি অবস্থার চেয়েও খারাপ’। অভিনেতা কৌশিক সেন বলেন, “বিজেপি ভারতের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক”।
ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের যে ভয়ংকর খেলা শুরু হয়েছে তার শেষ কোথায় ভবিতব্যই জানে তবে তা যে কারোর জন্যই শুভ নয় তা বলাই বাহুল্য।
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।