০৮:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রতিবাদ

মিশিগানে সনাতনীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক টাউন সেন্টারে গতকাল ৮ ডিসেম্বর রোববার দুপুর ১২টায় মিশিগান প্রবাসী বাংলাদেশি সনাতনীদের উদ্যোগে এক বিরাট প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।  বিগত কয়েক মাস যাবৎ বাংলাদেশে সনাতনীদের উপর শারিরিক, মানসিক নির্যাতন তথা মন্দির, বাড়ীঘর, দোকানপাট লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজী, ভয়ভীতি প্রদর্শন, দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসবের প্রতিবাদে  মিশিগানের দুর্গা টেম্পল, কালীবাড়ী, রামকৃষ্ণ মিশন ও শিব মন্দিরের যৌথ উদ্যোগে গতকাল এ বিরাট প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলেও ঠান্ডার মধ্যেও  বিপুল সংখ্যক সনাতনীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দুর্গা টেম্পলের প্রেসিডেন্ট পংকজ দাশ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শান্তিলাল বিশ্বাস, নিপেশ সুত্রধর, অবিনাশ চৌধুরী, সৌরভ চৌধুরী, শ্যামা হালদার, রতন হাওলাদার, অজিত দাশ, পংকজ দাশ, ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটির একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা, ‌ইসকনভক্ত এবং বৃহত্তর ডেট্রয়েটের বিভিন্ন

মন্দিরের সাধুসন্তসহ অনেকে।  সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিবার বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হয় আর সনাতনীদের উপর  নেমে আসে অমানিষা, চলে তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা। এ হামলা নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, আমরা চাই, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ।’  তারা বাংলাদেশে সনাতনীদের উপর শারিরিক, মানসিক নির্যাতন তথা মন্দির, বাড়ীঘর, দোকানপাট লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজী, ভয়ভীতি প্রদর্শন,  দেশ ছাড়ার হুমকি যারা দিচ্ছে তাদেরে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন। বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভুকে অনতি বিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানান। উক্ত সভায়  নারী, এই প্রজন্মের তরুণ, তরুণীরাও যোগ দেন, দূরের বিভিন্ন শহর থেকে অনেকে এসে এ সমাবেশে যোগদান করেন। । সমাবেশে অংশ গ্রহণকারীরা বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড, ফ্যাষ্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন ও প্রদর্শন করেন, তারা বিভিন্ন শ্লোগান দেন। এ সময় পথচারিরা হাত নাড়িয়ে তাদেরে সমর্থন জানান, কোন কোন গাড়ীচালক হর্ণ বাজিয়ে প্রতিবাদকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ মিশিগান (বাম) এর সহ-সভাপতি ও সিম্ফনি ক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট কমুউনিটি নেতা বিজিত ধর মনি এ ব্যাপারে আলাপকালে জানান, “১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সংখ্যালঘুরা সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতার স্বীকার, ১৯৭১ সালে তাদের উপর নেমে আসে বিভিষিকা, প্রাণের ভয়ে এক কোটি মানুষ আশ্রয় নেয় ভারতে।১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর আবারো নেমে অমানিষা, ‘৯০ এ স্বৈরাচারী এরশাদ আন্দোলনের মুখে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়, ২০০১ সালে আবারো সারা দেশে বিভৎস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই আমরা আবারো প্রত্যক্ষ

মিশিগান প্রবাসী বাংলাদেশি সনাতনীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন : ছবি : মিশিগান দর্পণ

করলাম সংখ্যালঘুদের উপর সারা দেশব্যাপী হামলা, নির্যাতন, মন্দির ভাঙ্গচুর, লুটপাটসহ সহিংসতা। কেন বারবার  সনাতনীদের উপর এ আক্রমণ।” এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিশিষ্ট কমুউনিটি নেতা অধ্যাপক অরবিন্দ মৃদুল চৌধুরী বলেন, “কেন বারবার হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হবেন, এবার নির্যাতনের অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে, এসব হামলা, নির্যাতন, মন্দির ভাঙ্গচুর, লুটপাটসহ সহিংসতার বিচার চাই, চিন্ময় প্রভুর মুক্তি চাই।” বাংলা প্রেস ক্লাব অব মিশিগান ইউএসএ এর সহ সভাপতি, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার মিশিগান প্রতিনিধি,  বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, গবেষক  পার্থ সারথী দেব বলেন, “আপনারা হয়ত পূর্ণিমার কথা ভূলে গেছেন, ভূলে গেছেন নূর হোসেনের কথা, ডাঃ মিলনের কথা,  গোপাল কৃষ্ণ মুহুরির কথা, নিদারাবাদের বিরজাবালার কথা। আসলে বাঙালি বড় বিস্মৃতি পরায়ন এক জাতি। প্রতিটি আন্দোলন, প্রতিটি নির্বাচনের পরই বিভিষিকা নেমে আসে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর। যে দলই বিজয়ী হোক না কেন পরাজিত দলের মূল টার্গেট হলো সংখ্যালঘুরা। গত ১০ বছর প্রকৃত অর্থে দেশে কোন নির্বাচনই ছিল না এরপরও সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা থেমে থাকেনি, চাই প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, এবার অবশ্য সনাতনীরা ঘুরে দাড়িয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের নিয়ে খেলে, ৭১ এর পর কোন সাম্প্রাদায়িক নির্যাতনের বিচার হয়নি।”

Tag :
About Author Information

মিশিগানে সনাতনীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন

প্রতিবাদ

মিশিগানে সনাতনীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন

আপডেট টাইম : ১০:১৯:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক টাউন সেন্টারে গতকাল ৮ ডিসেম্বর রোববার দুপুর ১২টায় মিশিগান প্রবাসী বাংলাদেশি সনাতনীদের উদ্যোগে এক বিরাট প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।  বিগত কয়েক মাস যাবৎ বাংলাদেশে সনাতনীদের উপর শারিরিক, মানসিক নির্যাতন তথা মন্দির, বাড়ীঘর, দোকানপাট লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজী, ভয়ভীতি প্রদর্শন, দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসবের প্রতিবাদে  মিশিগানের দুর্গা টেম্পল, কালীবাড়ী, রামকৃষ্ণ মিশন ও শিব মন্দিরের যৌথ উদ্যোগে গতকাল এ বিরাট প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলেও ঠান্ডার মধ্যেও  বিপুল সংখ্যক সনাতনীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দুর্গা টেম্পলের প্রেসিডেন্ট পংকজ দাশ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শান্তিলাল বিশ্বাস, নিপেশ সুত্রধর, অবিনাশ চৌধুরী, সৌরভ চৌধুরী, শ্যামা হালদার, রতন হাওলাদার, অজিত দাশ, পংকজ দাশ, ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটির একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা, ‌ইসকনভক্ত এবং বৃহত্তর ডেট্রয়েটের বিভিন্ন

মন্দিরের সাধুসন্তসহ অনেকে।  সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিবার বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হয় আর সনাতনীদের উপর  নেমে আসে অমানিষা, চলে তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা। এ হামলা নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, আমরা চাই, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ।’  তারা বাংলাদেশে সনাতনীদের উপর শারিরিক, মানসিক নির্যাতন তথা মন্দির, বাড়ীঘর, দোকানপাট লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজী, ভয়ভীতি প্রদর্শন,  দেশ ছাড়ার হুমকি যারা দিচ্ছে তাদেরে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন। বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভুকে অনতি বিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানান। উক্ত সভায়  নারী, এই প্রজন্মের তরুণ, তরুণীরাও যোগ দেন, দূরের বিভিন্ন শহর থেকে অনেকে এসে এ সমাবেশে যোগদান করেন। । সমাবেশে অংশ গ্রহণকারীরা বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড, ফ্যাষ্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন ও প্রদর্শন করেন, তারা বিভিন্ন শ্লোগান দেন। এ সময় পথচারিরা হাত নাড়িয়ে তাদেরে সমর্থন জানান, কোন কোন গাড়ীচালক হর্ণ বাজিয়ে প্রতিবাদকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ মিশিগান (বাম) এর সহ-সভাপতি ও সিম্ফনি ক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট কমুউনিটি নেতা বিজিত ধর মনি এ ব্যাপারে আলাপকালে জানান, “১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সংখ্যালঘুরা সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতার স্বীকার, ১৯৭১ সালে তাদের উপর নেমে আসে বিভিষিকা, প্রাণের ভয়ে এক কোটি মানুষ আশ্রয় নেয় ভারতে।১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর আবারো নেমে অমানিষা, ‘৯০ এ স্বৈরাচারী এরশাদ আন্দোলনের মুখে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়, ২০০১ সালে আবারো সারা দেশে বিভৎস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই আমরা আবারো প্রত্যক্ষ

মিশিগান প্রবাসী বাংলাদেশি সনাতনীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন : ছবি : মিশিগান দর্পণ

করলাম সংখ্যালঘুদের উপর সারা দেশব্যাপী হামলা, নির্যাতন, মন্দির ভাঙ্গচুর, লুটপাটসহ সহিংসতা। কেন বারবার  সনাতনীদের উপর এ আক্রমণ।” এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিশিষ্ট কমুউনিটি নেতা অধ্যাপক অরবিন্দ মৃদুল চৌধুরী বলেন, “কেন বারবার হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হবেন, এবার নির্যাতনের অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে, এসব হামলা, নির্যাতন, মন্দির ভাঙ্গচুর, লুটপাটসহ সহিংসতার বিচার চাই, চিন্ময় প্রভুর মুক্তি চাই।” বাংলা প্রেস ক্লাব অব মিশিগান ইউএসএ এর সহ সভাপতি, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার মিশিগান প্রতিনিধি,  বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, গবেষক  পার্থ সারথী দেব বলেন, “আপনারা হয়ত পূর্ণিমার কথা ভূলে গেছেন, ভূলে গেছেন নূর হোসেনের কথা, ডাঃ মিলনের কথা,  গোপাল কৃষ্ণ মুহুরির কথা, নিদারাবাদের বিরজাবালার কথা। আসলে বাঙালি বড় বিস্মৃতি পরায়ন এক জাতি। প্রতিটি আন্দোলন, প্রতিটি নির্বাচনের পরই বিভিষিকা নেমে আসে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর। যে দলই বিজয়ী হোক না কেন পরাজিত দলের মূল টার্গেট হলো সংখ্যালঘুরা। গত ১০ বছর প্রকৃত অর্থে দেশে কোন নির্বাচনই ছিল না এরপরও সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা থেমে থাকেনি, চাই প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, এবার অবশ্য সনাতনীরা ঘুরে দাড়িয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের নিয়ে খেলে, ৭১ এর পর কোন সাম্প্রাদায়িক নির্যাতনের বিচার হয়নি।”