যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম তিনটি মোটর কোম্পানীর (ফোর্ড, জেনারেল মোটরস, স্টেলান্টিস) শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে আমেরিকার ২০টি অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন স্থানের অটো শ্রমিকরা একাত্মতা প্রকাশ করে ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন। জানা গেছে ২০টি অঙ্গরাজ্যের ৪১টি প্রতিষ্টান এতে অংশ গ্রহণ করছেন। জেনারেল মোটরস ও স্টেলান্টিসের পার্টস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশানের সকল কর্মী গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে ধর্মঘটে যোগ দেয়ার জন্যে ওয়াক আউট করেন। ধর্মঘট আনুষ্টানিকভাবে গত সপ্তাহে শুরু হলে সীমিত সংখ্যক কারখানার মধ্যে তা থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে। ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন (ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কারস) ও গাড়ী নির্মাতারা আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন তবে শ্রমিক ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট শন ফেইন বলেছেন, গাড়ী নির্মাতাদের সাথে একটি চুক্তি করার জন্য দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ করবেন না। ফেইন বলেন, ফোর্ড
মোটর কোম্পানীর সাথে আলোচনা যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই জীবনযাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে মজুরি বৃদ্ধি, ছাটাইয়ের কর্মীদের অতিরিক্ত চাকরির নিরাপত্তা, লাভ বন্টন ফর্মুলা বৃদ্ধি, অস্থায়ী কর্মীদের অবিলম্বে চাকরিতে স্থায়ীকরণসহ আরো কিছু বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে জেনারেল মোটরস ও স্টেলান্টিসের সাথে আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে না, তারা বেশীর ভাগ দাবীই প্রত্যাখান করেছে। যার ফলে গতকাল শুক্রবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি অঙ্গরাজ্যের ঐ দুই কোম্পানীর হাজার হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন। ফোর্ড মোটর কোম্পানীর জন সংযোগ কর্মকর্তা ড্যান বারবোসা সাংবাদিকদের জানান, “আমরা সুন্দর একটি চুক্তি করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি যা ফোর্ড মোটর কোম্পানী ও তার কর্মী উভয় পক্ষের জন্যই পারস্পারিক সাফল্য ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির এক দ্বার উন্মোচন করবে।” জেনারেল মোটরস এর মুখপাত্র ডেভিড বার্নাস বলেন, “ইউনিয়নের ডাকে জেনারেল মোটরস এর আরো ১৮টি প্রতিষ্টানে ধর্মঘটে শামিল হওয়ার প্রয়োজন ছিল না কারণ দুই পক্ষের আলোচনা এখনো অব্যাহত রয়েছে।” স্টেলান্টিসের সিনিয়র ম্যানেজার জোডি টিনসন বলেন, “ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট শন ফেইনের দাবীগুলি আমরা ইতিমধ্যে প্রত্যাখান করেছি, আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক অফার দিয়েছি, এখনো এর কোন প্রতিক্রিয়া পাইনি, তবে দায়িত্বের সাথে আলোচনা ও যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে এ ধর্মঘটের প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে। গাড়ীর যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী বিভিন্ন কোম্পানী ইতিমধ্যেই কর্মীদেরে লেইড অফ দিতে শুরু করেছে। এতে মানুষের মধ্যে চিন্তা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ উদ্বিগ্নের মধ্যে আছেন। এই ধর্মঘট কতদিন চলবে তা অনিশ্চিত। মিশিগান প্রবাসী বাঙ্গালিদের অধিকাংশই মোটর গাড়ীর যন্ত্রাংশ নির্মাণকারী প্রতিষ্টানে কাজ করেন। মিশিগানে প্রায় ৮০ হাজার বাঙ্গালি বাস করেন। গত কয়েক মাস যাবত এমনিতেই চিপসের অভাবে গাড়ী প্রস্তুতকারী কোম্পানীগুলিতে উৎপাদন কম হচ্ছিল।
এদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে মিশিগানে আসছেন মোটর কোম্পানীর (ফোর্ড, জেনারেল মোটরস, স্টেলান্টিস) শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে অংশ গ্রহণকারী শ্রমিকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে। তিনি এখানে একটি শ্রমিক সমাবেশে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মিশিগান আসার প্রতিক্রিয়ায় শ্রমিক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট শন ফেইন বলেছেন, “আমরা বিলিয়নার, মিলিয়নারের নির্বাচনে সমর্থন দিতে পারি না, যারা শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম, সমস্যা বুঝে না তাদের কাছ থেকে সমাধানের আশা করা ঠিক না।” এখানে উল্লেখ্য ২০২৪ সালে অনুষ্টিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কারস এখনো কাউকে সমর্থন দেয় নাই। এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “আমি আগামী মঙ্গলবার মিশিগান যাবো ধর্মঘটি অটো শ্রমিকদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে, তাদের নায্য দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমি তাদের সাথে পিকেটিং এ অংশ গ্রহণ করবো।” প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখানে একটি সমাবেশে ভাষণ দান করবেন বলে জানা গেছে।