০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
রম্য রচনা

বল্টুর নতুন ধান্ধা

মার্চ মাস। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে।  সকাল থেকেই তুষারপাত হচ্ছে। জানালার পাশে বসে তুষারপাত দেখছি। পাতাশূন্য গাছে তুষার পড়ে পাথর হয়ে গাছের ডালপালাসহ পুরো গাছটা যেন এক বরফের গাছ হয়ে গেছে। প্রকৃতির এই অপরুপ রুপ দেখছি আর মনে মনে শামসুর রাহমানের কবিতা ‘কে যেন তরঙ্গ তুলে কুয়াশায়’ মনে মনে আওড়াচ্ছি, এমন সময় ভাগ্নে বল্টুর ফোন।

মামা কেমন আছেন?

এইতো, ঠান্ডা, তুষারপাত

কি যে বলেন মামা, ঠান্ডাতো চলে যাচ্ছে।

যাচ্ছে যাচ্ছে বলেওতো আর যাচ্ছে না। আচ্ছা বলো তোমার খবর কি?

না মামা, ভাবছি একটা অনুষ্ঠান করবো।

তাতো তুমি প্রতি বছরই করো, তো এবার কি ধরণের অনুষ্ঠান করবে বলে মন স্থির করেছো।

পুরষ্কার বিতরণী।

সেটাতো এবার প্রচুর হয়েছে।

না মামা আমার অনুষ্ঠান হবে ব্যতিক্রমী।

সেটা কি রকম

এই ধরেন কমুউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিশেষ পুরষ্কার।

সবকিছুতেই বিশেষ বিশেষ বলে বিশেষ শব্দটারই বিশেষত্বের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছো

আরে না মামা এবারের অনুষ্ঠান হবে ফাটাফাটি, আলো ঝলমল, জাঁকজমকপূর্ণ

তাতো বুঝলাম, কিন্তু এই ফাটাফাটি অনুষ্ঠান করতেতো অনেক খরচ, হল ভাড়া, সাউন্ড সিষ্টেম, পুরষ্কার, খানাপিনা, গান বাজনা

এসবের কোন চিন্তা নাই মামা

কেন?

ঐ যাদেরে পুরষ্কার দিবো তাদের কাছ থেকে ৩০০ ডলার করে নিবো

এটা কেমন কথা

আরে মামা দিন এখন পাল্টেছে, কৈ এর তেলে কৈ ভাজা আর কি, অন্তত ৩০ জন এক পায়ে লাইনে খাড়া আছে, টাকা দিয়ে পুরষ্কার নিতে।

ভাল, তো অপাত্রে পুরষ্কার দিচ্ছো নাতো

আরে মামা পাত্র আর অপাত্র, এখন তেল পানি সমান দর, কে দাতা আর কে গ্রহিতা বুঝার কোন উপায় নাই। সবই ধূলায় অন্ধকার

ভাল, সমাজ, সংস্কৃতি এগিয়ে চলেছে তোমাদের মত ক্ষণজন্মাদের কারণে, তো এতো এতো পুরষ্কার, বিতরণ করবে কে

মামা গরীবের বন্ধু, যার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র আমাদের এলাকার বড় নেতা মফিজভাই, এজন্য তার কাছ থেকে নেবো এক হাজার ডলার, বিশেষ অতিথি থাকবেন কমুউনিটির বহুরুপী নেতা আমাদের চটকুভাই, তিনি দিবেন ৫০০ ডলার। হল ভাড়া দিবেন বিল্টুচাচা এই শর্তে যে  তিনি ১০ মিনিট বক্তব্য দিবেন কমুউনিটির উদ্দেশে, তিনি এই কমুউনিটির জন্য কি বিরাট বিরাট কাজ করেছেন,  আপনারা কষ্ট করে কানে তুলো দিয়ে এ সময়টা পার করতে হবে। কারণ অনেক সময় বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়।

স্বার্থটাতো হবে তোমার আমরা কষ্ট করতে যাবো কেনো

মামা একটা কথা আছে না সকলের তরে সকলে আমরা। তাহলেই না সমাজ, কমুউনিটি এগিয়ে যাবে। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে আমাদের নাম, হাকডাক

ভাল, এতো বড় অনুষ্টান প্রচার, প্রসারের কি কোন ব্যবস্থা রেখেছো

আরে মামা আমার প্রচার বাহিনীতো ভিডিও ক্যামেরা, ক্যামেরা নিয়ে রেডি, সরাসরি লাইভ হবে ফেসবুক, ইউটিউবে।

সবইতো বুঝলাম কিন্তু এতো পুরষ্কার প্রাপক, নেতা, উপনেতা, পাতিনেতা, সঞ্চালক, পরিচালক, বক্তা মঞ্চে উঠলে মঞ্চ না আবার ভেঙ্গে পড়ে। এখনতো নেতাদের ভারে মঞ্চ ভেঙ্গে পড়ার এক সংস্কৃতি আমরা দেখছি। ধরিত্রী যেন আর চাপ নিতে পারছে না।

আরে মামা কি যে বলেন, সমস্যাতো সেটা না, মূল সমস্যা হচ্ছে  দর্শক। এখনতো দর্শক পাওয়া যায় না। হাততালি দেয়ার মানুষ নাই, সবাই নেতা, সবাই বক্তা। বক্তৃতা শুনার লোক নাই। দর্শক সারি, চেয়ার খালি পড়ে থাকে।

একটা কাজ করতে পারো, একটা ঘোষণা দাও দর্শকদেরও পুরষ্কার দেয়া হবে, অবশ্য সবাইতো আর তোমার মতো ধান্ধাবাজ নয়।

মামা আপনি সব সময় বলেন নতুন কিছু করো, আমি যখনই ভাল একটা কিছু করার চেষ্টা করি তখনই আপনি আমাকে বলেন ধান্ধাবাজ, দুই নম্বরি। আপনারা যদি আমাদেরে এপ্রিসিয়েট না করেন তবে আমরা নতুন প্রজন্মকে  দিক নির্দেশনা দিবো কিভাবে।

তা অবশ্য ঠিক। তো এই নতুন প্রজন্মের অংশ গ্রহণের জন্য কোন ব্যবস্থা, কোন পুরষ্কারের ব্যবস্থা রেখেছো কি?

আরে মামা নতুন প্রজন্মের এরাতো আসতে চায় না আমাদের এসব অনুষ্ঠানে।

আসবে কিভাবে, তারা এসেতো তোমাদের এই লম্বা বক্তৃতা, তামশা দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেছে।

মামা এবার কিন্তু আপনাকে আমাদের অনুষ্টানে আসতে হবে

তা না হয় আসবো

আপনাদের উপস্থিতিতে আমাদের অনুষ্টান হয়ে উঠবে সুন্দর, সফল এবং  অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে গড়বে এক নতুন মাইল ফলক।

তা অবশ্য আমি দিব্য দৃষ্টি দিয়েই দেখতে পাচ্ছি।

Tag :
About Author Information

রম্য রচনা

বল্টুর নতুন ধান্ধা

আপডেট টাইম : ১১:২০:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩

মার্চ মাস। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে।  সকাল থেকেই তুষারপাত হচ্ছে। জানালার পাশে বসে তুষারপাত দেখছি। পাতাশূন্য গাছে তুষার পড়ে পাথর হয়ে গাছের ডালপালাসহ পুরো গাছটা যেন এক বরফের গাছ হয়ে গেছে। প্রকৃতির এই অপরুপ রুপ দেখছি আর মনে মনে শামসুর রাহমানের কবিতা ‘কে যেন তরঙ্গ তুলে কুয়াশায়’ মনে মনে আওড়াচ্ছি, এমন সময় ভাগ্নে বল্টুর ফোন।

মামা কেমন আছেন?

এইতো, ঠান্ডা, তুষারপাত

কি যে বলেন মামা, ঠান্ডাতো চলে যাচ্ছে।

যাচ্ছে যাচ্ছে বলেওতো আর যাচ্ছে না। আচ্ছা বলো তোমার খবর কি?

না মামা, ভাবছি একটা অনুষ্ঠান করবো।

তাতো তুমি প্রতি বছরই করো, তো এবার কি ধরণের অনুষ্ঠান করবে বলে মন স্থির করেছো।

পুরষ্কার বিতরণী।

সেটাতো এবার প্রচুর হয়েছে।

না মামা আমার অনুষ্ঠান হবে ব্যতিক্রমী।

সেটা কি রকম

এই ধরেন কমুউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিশেষ পুরষ্কার।

সবকিছুতেই বিশেষ বিশেষ বলে বিশেষ শব্দটারই বিশেষত্বের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছো

আরে না মামা এবারের অনুষ্ঠান হবে ফাটাফাটি, আলো ঝলমল, জাঁকজমকপূর্ণ

তাতো বুঝলাম, কিন্তু এই ফাটাফাটি অনুষ্ঠান করতেতো অনেক খরচ, হল ভাড়া, সাউন্ড সিষ্টেম, পুরষ্কার, খানাপিনা, গান বাজনা

এসবের কোন চিন্তা নাই মামা

কেন?

ঐ যাদেরে পুরষ্কার দিবো তাদের কাছ থেকে ৩০০ ডলার করে নিবো

এটা কেমন কথা

আরে মামা দিন এখন পাল্টেছে, কৈ এর তেলে কৈ ভাজা আর কি, অন্তত ৩০ জন এক পায়ে লাইনে খাড়া আছে, টাকা দিয়ে পুরষ্কার নিতে।

ভাল, তো অপাত্রে পুরষ্কার দিচ্ছো নাতো

আরে মামা পাত্র আর অপাত্র, এখন তেল পানি সমান দর, কে দাতা আর কে গ্রহিতা বুঝার কোন উপায় নাই। সবই ধূলায় অন্ধকার

ভাল, সমাজ, সংস্কৃতি এগিয়ে চলেছে তোমাদের মত ক্ষণজন্মাদের কারণে, তো এতো এতো পুরষ্কার, বিতরণ করবে কে

মামা গরীবের বন্ধু, যার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র আমাদের এলাকার বড় নেতা মফিজভাই, এজন্য তার কাছ থেকে নেবো এক হাজার ডলার, বিশেষ অতিথি থাকবেন কমুউনিটির বহুরুপী নেতা আমাদের চটকুভাই, তিনি দিবেন ৫০০ ডলার। হল ভাড়া দিবেন বিল্টুচাচা এই শর্তে যে  তিনি ১০ মিনিট বক্তব্য দিবেন কমুউনিটির উদ্দেশে, তিনি এই কমুউনিটির জন্য কি বিরাট বিরাট কাজ করেছেন,  আপনারা কষ্ট করে কানে তুলো দিয়ে এ সময়টা পার করতে হবে। কারণ অনেক সময় বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়।

স্বার্থটাতো হবে তোমার আমরা কষ্ট করতে যাবো কেনো

মামা একটা কথা আছে না সকলের তরে সকলে আমরা। তাহলেই না সমাজ, কমুউনিটি এগিয়ে যাবে। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে আমাদের নাম, হাকডাক

ভাল, এতো বড় অনুষ্টান প্রচার, প্রসারের কি কোন ব্যবস্থা রেখেছো

আরে মামা আমার প্রচার বাহিনীতো ভিডিও ক্যামেরা, ক্যামেরা নিয়ে রেডি, সরাসরি লাইভ হবে ফেসবুক, ইউটিউবে।

সবইতো বুঝলাম কিন্তু এতো পুরষ্কার প্রাপক, নেতা, উপনেতা, পাতিনেতা, সঞ্চালক, পরিচালক, বক্তা মঞ্চে উঠলে মঞ্চ না আবার ভেঙ্গে পড়ে। এখনতো নেতাদের ভারে মঞ্চ ভেঙ্গে পড়ার এক সংস্কৃতি আমরা দেখছি। ধরিত্রী যেন আর চাপ নিতে পারছে না।

আরে মামা কি যে বলেন, সমস্যাতো সেটা না, মূল সমস্যা হচ্ছে  দর্শক। এখনতো দর্শক পাওয়া যায় না। হাততালি দেয়ার মানুষ নাই, সবাই নেতা, সবাই বক্তা। বক্তৃতা শুনার লোক নাই। দর্শক সারি, চেয়ার খালি পড়ে থাকে।

একটা কাজ করতে পারো, একটা ঘোষণা দাও দর্শকদেরও পুরষ্কার দেয়া হবে, অবশ্য সবাইতো আর তোমার মতো ধান্ধাবাজ নয়।

মামা আপনি সব সময় বলেন নতুন কিছু করো, আমি যখনই ভাল একটা কিছু করার চেষ্টা করি তখনই আপনি আমাকে বলেন ধান্ধাবাজ, দুই নম্বরি। আপনারা যদি আমাদেরে এপ্রিসিয়েট না করেন তবে আমরা নতুন প্রজন্মকে  দিক নির্দেশনা দিবো কিভাবে।

তা অবশ্য ঠিক। তো এই নতুন প্রজন্মের অংশ গ্রহণের জন্য কোন ব্যবস্থা, কোন পুরষ্কারের ব্যবস্থা রেখেছো কি?

আরে মামা নতুন প্রজন্মের এরাতো আসতে চায় না আমাদের এসব অনুষ্ঠানে।

আসবে কিভাবে, তারা এসেতো তোমাদের এই লম্বা বক্তৃতা, তামশা দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেছে।

মামা এবার কিন্তু আপনাকে আমাদের অনুষ্টানে আসতে হবে

তা না হয় আসবো

আপনাদের উপস্থিতিতে আমাদের অনুষ্টান হয়ে উঠবে সুন্দর, সফল এবং  অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে গড়বে এক নতুন মাইল ফলক।

তা অবশ্য আমি দিব্য দৃষ্টি দিয়েই দেখতে পাচ্ছি।