০৩:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
রম্য রচনা

বল্টু যখন সাংবাদিক

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার বিখ্যাত কবিতা ছাড়পত্রে লিখেছেন, এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের। আসলেই নবীনের আগমনে প্রবীণদেরকে স্থান করে দিতে হয়। ‘বল্টু’ এ প্রজন্মের একজন উদীয়মান সাংবাদিক। সম্পর্কে আমার ভাগ্নে। আগামীতে বল্টু বিভিন্ন সংবাদ নিয়ে হাজির হবে আপনাদের কাছে তাই বল্টুর একটু পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়বোধ থেকেই আমার আজকের এ লেখা। আজ থেকে ঠিক চারমাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের  মিশিগানের এক রেষ্টুরেন্ট থেকে ত্রিসন্ধ্যায় পার্টি শেষে আমি বের হচ্ছি এমন সময় ২৪/২৫ বছরের এক যুবক আমাকে নত হয়ে  প্রণাম করতে চাইলো, আমি তাকে বুকে টেনে নিলাম, আমি কিছু বলার আগেই সে তার নাম, বাবার নাম,আমার লেখার একজন পাঠকসহ বিভিন্ন কথা মোলায়েমভাবে খুব ধীরে ধীরে সুন্দর করে গুছিয়ে বলে গেল। তার সম্মোহন শক্তি দেখে আমি বিমোহিত। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তার চোখে মুখে যেন কি একটা অপ্রাকৃত শোভা দেখতে পেলাম। তার চেহারায় আমি দেখতে পেলাম ভবিষ্যতের আবাহন। দেখা হবে বলে চলে যেতে চাইলাম। সে আমার ফোন নাম্বার চাইলো, কেন জানি, না করতে পারলাম না। এর কিছুদিন পর ফোন। জিজ্ঞেস করলাম কে, অপরপ্রান্ত থেকে জবাব আমি বল্টু। নামটা নিশ্চিত হতে আবার জিজ্ঞেস করলে সে একি নাম বললো। নিজ থেকেই বললো, একটু ব্যতিক্রম তাই না। এটা তার মা বাবার দেয়া নাম নয়, একটু দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজের দেয়া এ নাম। কয়েকদিন

আগে আপনার সাথে আলাপ হয়েছিল। আজ বিশেষ এক প্রয়োজনে আপনার পরামর্শ চাইছি। আমি সাংবাদিক হতে চাই। আমি বললাম লিখে যাও। সে বললো আমারতো লেখাপড়া বেশী না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনক রকমে বানান করে বাংলা লিখতে পারোতো। সে বললো তা পারি।আমি বললাম তাহলে হয়ে যাবে। সে জিজ্ঞেস করলো সাংবাদিক হওয়ার শর্টকাট কোন রাস্তা আছে কি। আমি বললাম আমার জানা নেই। আমি তাকে ঢাকার একটি অনলাইন পত্রিকায় লিখতে বললাম। বেশ কিছুদিন পর কমিউনিটির এক অনুষ্ঠানে এক কমিউনিটি সেন্টারে তার সাথে আবারো দেখা। বল্টুর গাড়ীতে ‘সাংবাদিক’ এর স্টিকার, পিঠে ব্যাগ, বুকে পত্রিকার ব্যাজ। ব্যস্ত সাংবাদিক।ভিজিটিং কার্ড বিলি করছে। তার নামের আগে লিখা কবি ও সাংবাদিক বল্টু।

 কয়দিন আগে প্রবীণ একজন সাংবাদিকের সাথে সাংবাদিকতার ‘এই সময় এবং সেই সময়’ নিয়ে কথা হচ্ছিলো, আমি বললাম, প্রায় ৩৫ বছর যাবত লেখালেখি করছি কিন্তু নিজেকে কখনো লেখক বলে পরিচয় দেইনি। অবশ্য দিনতো এখন পাল্টেছে। মিশিগানে এখন গভীর রাত। কিছুক্ষণ আগে বল্টু ফোন করে জানালো তার একটি বই বেরুচ্ছে, বইয়ের নাম ‘কেমনে আমি সাংবাদিক হইলাম’ ১ম খন্ড। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ২য় খন্ড কি এবার বেরুবে। সে বললো চেষ্টা করছি। জিজ্ঞাসা করলাম তোমার বই পড়বে কে। বললো, আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, আপনাদেরে দিবো সৌজন্য কপি, আপনারা করবেন আমার বইয়ের আলোচনা, সমালোচনা। আলোচনা করলেতো আলোচনায় রইলাম আর সমালোচনা করলেতো হিট, অনেক পাঠক এখন নিগেটিভ নিউজ পড়তে ভালবাসে। আর বইয়ের ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিলেইতো সুপারহিট।

সাংবাদিকতা করছো ৬ মাস এখনো হয়নি এর মধ্যে বাজারে এতো বদনাম।

মামা ভাল কাজ করলেতো বদনাম হবেই। পরশ্রী কাতরতা মামা।

শুনলাম নিউজ করতে নাকি টেকাটুকা লও।

আরে না মামা, ঐ  যাতায়াত ভাতা আরকি। পেট্রোলের যে দাম বাড়ছে, জানইতো

তুমি যে টেকাটুকা লও, পত্রিকা কি সেটা জানে?

আরে মামা সব কথাকি পত্রিকারে জানাইতে হইবো।

মাঝে মাঝে দেখি অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিউজ গায়েব করে ফেল, বিষয় কি?

মামা সমাজের জন্য ক্ষতিকর নিউজ ছাঁপিয়ে কি লাভ

কোনটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর সেটাতো দেখবে পত্রিকা, তোমার দায়িত্ব নিউজ পাঠানো।

শুনলাম তোমরা নাকি একটা সংগঠন করেছো।

ঠিকই শুনেছেন। কিন্তু সংগঠনটি দু টুকরো এমন কি তিন টুকরো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কিন্তু কেন?

কারণ সভাপতি প্রার্থী ৩/৪ জন

যোগ্য দেখে একজনকে দিয়ে দাও।

যোগ্য দেখলে হবে না মামা। কার মালকড়ি আছে দেখতে হবে। খরচপাতি আছে না।

তরমুজ মিয়ারে দিয়ে দাও, অভিজ্ঞ ও সিনিয়র মানুষ।

আরে না, আমাদের ইচ্ছা মফিজচাচারে বানামু।

ভাগ্নে তুমি এতো বড় সাংবাদিক অথচ মাসের পর মাস যায় কোন সংবাদ মূল পত্রিকায় দেখি না। তোমার ২/১টা যে নিউজ দেখি তাও পত্রিকার ‘প্রবাস’ পাতায়, ২/৩ মাসে ১বার।

পরের পাতায়…

মামা তুমি কি নিউজ দেখার জন্য অণুবিক্ষণ যন্ত্র নিয়ে বসে থাকো, এরজন্যই তোমার কিছু হয় না।

তা ঠিক।

মামা যে জন্য তোমাকে ফোন করেছি, সেটা বলি, আগামী রোববার সন্ধ্যা ৭টায় আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, এই অনুষ্ঠানে তোমাকে থাকতে হবে।

তো  মোড়ক উন্মোচন করবে কে?

কেন? বিশিষ্ট লেখক, প্রাবন্ধিক উড়ফু মিয়া উরফে ঝান্ডুচাচা।

সেতো ঠিকমতো বাংলায় দম্তখতই দিতে পারে না তাছাড়া….

মামা উনি আমার পুরো অনুষ্ঠানের খরচাপাতি দিবেন।

ভাল।

দোয়া করবেন মামা।

আমার দোয়া তোমার জন্য সব সময় থাকবে।

 আমি দিব্য দৃষ্টি দিয়ে দেখছি তোমার উত্থান কেউ ঠেকাতে পারবে না।

Tag :
About Author Information

রম্য রচনা

বল্টু যখন সাংবাদিক

আপডেট টাইম : ১০:৫৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার বিখ্যাত কবিতা ছাড়পত্রে লিখেছেন, এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের। আসলেই নবীনের আগমনে প্রবীণদেরকে স্থান করে দিতে হয়। ‘বল্টু’ এ প্রজন্মের একজন উদীয়মান সাংবাদিক। সম্পর্কে আমার ভাগ্নে। আগামীতে বল্টু বিভিন্ন সংবাদ নিয়ে হাজির হবে আপনাদের কাছে তাই বল্টুর একটু পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়বোধ থেকেই আমার আজকের এ লেখা। আজ থেকে ঠিক চারমাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের  মিশিগানের এক রেষ্টুরেন্ট থেকে ত্রিসন্ধ্যায় পার্টি শেষে আমি বের হচ্ছি এমন সময় ২৪/২৫ বছরের এক যুবক আমাকে নত হয়ে  প্রণাম করতে চাইলো, আমি তাকে বুকে টেনে নিলাম, আমি কিছু বলার আগেই সে তার নাম, বাবার নাম,আমার লেখার একজন পাঠকসহ বিভিন্ন কথা মোলায়েমভাবে খুব ধীরে ধীরে সুন্দর করে গুছিয়ে বলে গেল। তার সম্মোহন শক্তি দেখে আমি বিমোহিত। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তার চোখে মুখে যেন কি একটা অপ্রাকৃত শোভা দেখতে পেলাম। তার চেহারায় আমি দেখতে পেলাম ভবিষ্যতের আবাহন। দেখা হবে বলে চলে যেতে চাইলাম। সে আমার ফোন নাম্বার চাইলো, কেন জানি, না করতে পারলাম না। এর কিছুদিন পর ফোন। জিজ্ঞেস করলাম কে, অপরপ্রান্ত থেকে জবাব আমি বল্টু। নামটা নিশ্চিত হতে আবার জিজ্ঞেস করলে সে একি নাম বললো। নিজ থেকেই বললো, একটু ব্যতিক্রম তাই না। এটা তার মা বাবার দেয়া নাম নয়, একটু দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজের দেয়া এ নাম। কয়েকদিন

আগে আপনার সাথে আলাপ হয়েছিল। আজ বিশেষ এক প্রয়োজনে আপনার পরামর্শ চাইছি। আমি সাংবাদিক হতে চাই। আমি বললাম লিখে যাও। সে বললো আমারতো লেখাপড়া বেশী না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনক রকমে বানান করে বাংলা লিখতে পারোতো। সে বললো তা পারি।আমি বললাম তাহলে হয়ে যাবে। সে জিজ্ঞেস করলো সাংবাদিক হওয়ার শর্টকাট কোন রাস্তা আছে কি। আমি বললাম আমার জানা নেই। আমি তাকে ঢাকার একটি অনলাইন পত্রিকায় লিখতে বললাম। বেশ কিছুদিন পর কমিউনিটির এক অনুষ্ঠানে এক কমিউনিটি সেন্টারে তার সাথে আবারো দেখা। বল্টুর গাড়ীতে ‘সাংবাদিক’ এর স্টিকার, পিঠে ব্যাগ, বুকে পত্রিকার ব্যাজ। ব্যস্ত সাংবাদিক।ভিজিটিং কার্ড বিলি করছে। তার নামের আগে লিখা কবি ও সাংবাদিক বল্টু।

 কয়দিন আগে প্রবীণ একজন সাংবাদিকের সাথে সাংবাদিকতার ‘এই সময় এবং সেই সময়’ নিয়ে কথা হচ্ছিলো, আমি বললাম, প্রায় ৩৫ বছর যাবত লেখালেখি করছি কিন্তু নিজেকে কখনো লেখক বলে পরিচয় দেইনি। অবশ্য দিনতো এখন পাল্টেছে। মিশিগানে এখন গভীর রাত। কিছুক্ষণ আগে বল্টু ফোন করে জানালো তার একটি বই বেরুচ্ছে, বইয়ের নাম ‘কেমনে আমি সাংবাদিক হইলাম’ ১ম খন্ড। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ২য় খন্ড কি এবার বেরুবে। সে বললো চেষ্টা করছি। জিজ্ঞাসা করলাম তোমার বই পড়বে কে। বললো, আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, আপনাদেরে দিবো সৌজন্য কপি, আপনারা করবেন আমার বইয়ের আলোচনা, সমালোচনা। আলোচনা করলেতো আলোচনায় রইলাম আর সমালোচনা করলেতো হিট, অনেক পাঠক এখন নিগেটিভ নিউজ পড়তে ভালবাসে। আর বইয়ের ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিলেইতো সুপারহিট।

সাংবাদিকতা করছো ৬ মাস এখনো হয়নি এর মধ্যে বাজারে এতো বদনাম।

মামা ভাল কাজ করলেতো বদনাম হবেই। পরশ্রী কাতরতা মামা।

শুনলাম নিউজ করতে নাকি টেকাটুকা লও।

আরে না মামা, ঐ  যাতায়াত ভাতা আরকি। পেট্রোলের যে দাম বাড়ছে, জানইতো

তুমি যে টেকাটুকা লও, পত্রিকা কি সেটা জানে?

আরে মামা সব কথাকি পত্রিকারে জানাইতে হইবো।

মাঝে মাঝে দেখি অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিউজ গায়েব করে ফেল, বিষয় কি?

মামা সমাজের জন্য ক্ষতিকর নিউজ ছাঁপিয়ে কি লাভ

কোনটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর সেটাতো দেখবে পত্রিকা, তোমার দায়িত্ব নিউজ পাঠানো।

শুনলাম তোমরা নাকি একটা সংগঠন করেছো।

ঠিকই শুনেছেন। কিন্তু সংগঠনটি দু টুকরো এমন কি তিন টুকরো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কিন্তু কেন?

কারণ সভাপতি প্রার্থী ৩/৪ জন

যোগ্য দেখে একজনকে দিয়ে দাও।

যোগ্য দেখলে হবে না মামা। কার মালকড়ি আছে দেখতে হবে। খরচপাতি আছে না।

তরমুজ মিয়ারে দিয়ে দাও, অভিজ্ঞ ও সিনিয়র মানুষ।

আরে না, আমাদের ইচ্ছা মফিজচাচারে বানামু।

ভাগ্নে তুমি এতো বড় সাংবাদিক অথচ মাসের পর মাস যায় কোন সংবাদ মূল পত্রিকায় দেখি না। তোমার ২/১টা যে নিউজ দেখি তাও পত্রিকার ‘প্রবাস’ পাতায়, ২/৩ মাসে ১বার।

পরের পাতায়…

মামা তুমি কি নিউজ দেখার জন্য অণুবিক্ষণ যন্ত্র নিয়ে বসে থাকো, এরজন্যই তোমার কিছু হয় না।

তা ঠিক।

মামা যে জন্য তোমাকে ফোন করেছি, সেটা বলি, আগামী রোববার সন্ধ্যা ৭টায় আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, এই অনুষ্ঠানে তোমাকে থাকতে হবে।

তো  মোড়ক উন্মোচন করবে কে?

কেন? বিশিষ্ট লেখক, প্রাবন্ধিক উড়ফু মিয়া উরফে ঝান্ডুচাচা।

সেতো ঠিকমতো বাংলায় দম্তখতই দিতে পারে না তাছাড়া….

মামা উনি আমার পুরো অনুষ্ঠানের খরচাপাতি দিবেন।

ভাল।

দোয়া করবেন মামা।

আমার দোয়া তোমার জন্য সব সময় থাকবে।

 আমি দিব্য দৃষ্টি দিয়ে দেখছি তোমার উত্থান কেউ ঠেকাতে পারবে না।