১০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
তর্জনী

তর্জনী

Biopic 'Bangabandhu' to release in March 2022; production fast tracked -  The Economic Times

আমি আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরের যেখানটায় থাকি রাস্তার উল্টো দিকেই একটা পানশালা। সেখানে দুপুরের দিকে বয়স্ক মানুষের আনা গোনা, বিকেল থেকে তরুণ, তরুণীদের। কাজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে শীতের এক ত্রিসন্ধ্যায় সেই পানশালার সামনে অস্পষ্ট এক দৃশ্য দেখে আমি হতবাক! সেই দৃশ্যটি আরেকবার দেখার আশায় মাঝে মাঝে ঐ পানশালায় যাই। পানের সাথে সাথে কেউ খেলাধূলা করে, কেউ টিভিতে বেইজ বল, কেউ ঘোড়দৌড়, কেউবা কার রেইস দেখে। কিন্তু জেসিকা তার ব্যতিক্রম। প্রতি সন্ধ্যায় কাঁধে একটা ব্যাগ, হাতে কাগজ কলম নিয়ে বারে এসে একটা ড্রিংক্সের অর্ডার দিয়ে একেবার কোণায় গিয়ে বসে। গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে কি লেখালেখি করে। নিজ থেকেই একদিন আলাপ জমাতে চেষ্টা করি, আমাকে সে জিজ্ঞেস করে আর ইউ ফ্রম ইন্ডিয়া? আমি হ্যাঁ না কিছুই বলি না, সে বলে আই থিংক ইউ আর ফ্রম বেংলাদেশ। আমি বলি ঠিকই তাহলে ধরতে পেরেছো। জেসিকা বলে এ এলাকায় অনেক বাঙ্গালি থাকেন, ২/১ জনের সাথে আলাপ হয়েছে। তাছাড়া আমার দাদু তোমাদের ওখানে ছিলেন দীর্ঘদিন, তার কাছ থেকে জেনেছি, ১৯৭০ সালের বন্যায় তোমাদের ওখানে অনেক লোক মারা গেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা, বাঙ্গালীর আত্নত্যাগ, বীরত্বের কথা আজো তিনি বলেন। তোমাদের আর্সেনিক সমস্যার কি সমাধান হয়েছে? জেসিকা আমায় জিজ্ঞেস করে। ৯০ এর গণঅভ্যূথান, রানা প্লাজা ট্র্যজেডি সব কিছুই যেন তার নখোদর্পনে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি তুমি বাংলাদেশ সম্বন্ধে এত খবর রাখো? সে বলে, আমি একটা পত্রিকায় কাজ করি, তাই খোঁজতো রাখতেই হয়। প্রায়ই জেসিকার সাথে দেখা হয়, হাই. হ্যালো। পরিচয়ের পর কেটে গেছে কয়েক মাস। একদিন রাতে টিভিতে স্থানীয় নিউজ দেখছি, হঠাৎ চোখটা টিভি স্কিনে আটকে গেল, খুব পরিচিত মুখ, চেনাচেনা লাগছে, জেসিকা! নামটাও পরিচিত। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। নিউজ কাষ্টার বলে যাচ্ছেন, জেসিকা একজন অনুসন্ধ্যানী সাংবাদিক ছিলেন, বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারী করে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন, “ইনডেক্স ফিঙ্গার” নামে একটি ডকুমেন্টারী ফিল্মের কাজ ছিল প্রায় শেষ পর্যায়ে….! খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভাবি জেসিকাতো আমার কেউ না তবে কেন তার জন্যে মনটা কাঁদে। দিন যায়, মাস যায়। আমি মাঝে মাঝে সেই পানশালায় যাই, একেবারের কোণার চেয়ারটায় কেউ আর বসে না যেখানটায় জেসিকা বসতেন।। স্থানীয় একটি পত্রিকায় হঠাৎ চোখ পড়লো, জেসিকার অসমাপ্ত ডকুমেন্টারী ফিল্মটা তার বয়ফ্রেন্ড শেষ করেছেন এবং আগামী রোববার স্থানীয় একটি থিয়েটার হলে ছবিটি প্রদর্শিত হবে। বন্ধু বিজয় ধর রনি ও মিলটন হাসানকে নিয়ে ছবিটি দেখতে গেলাম। শুরুতেই সারা পর্দা জুড়ে বিশাল একটি তর্জনী, সাথে খুব পরিচিত আবহ সঙ্গীত। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭২, ১৯৭৫… ২০১৫। ৫২ মিনিটের ফিল্মে বাঙ্গালির আন্দোলন, সংগ্রাম, আত্নত্যাগ, চাওয়া পাওয়া, স্বপ্নভঙ্গের বাস্তব চিত্র কত নিঁখুত ভাবে যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা ছবিটা না দেখলে বোঝা যাবে না।ছবি শেষে তিনজন যখন হল থেকে বের হলাম, আমরা সবাই নির্বাক। একজন অবাঙ্গালী হয়ে জেসিকা যা করলেন তাতে সত্যি আমি অভিভূত। ছবিটা আমাদের সবার দেখা উচিত।আমার চোখে ভেসে উঠে পানশালায় গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে জেসিকা ডুবে যেতেন বাংলা আর বাঙ্গালিত্বে। প্রণমি তোমায় জেসিকা।

Tag :
About Author Information

মিশিগানে ‘বাংলাটাউন’ নামক ফলকটিতে কে বা কারা বাংলাদেশের পতাকাটি মুছে দিয়েছে

তর্জনী

তর্জনী

আপডেট টাইম : ১০:২০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০২২
Biopic 'Bangabandhu' to release in March 2022; production fast tracked -  The Economic Times

আমি আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরের যেখানটায় থাকি রাস্তার উল্টো দিকেই একটা পানশালা। সেখানে দুপুরের দিকে বয়স্ক মানুষের আনা গোনা, বিকেল থেকে তরুণ, তরুণীদের। কাজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে শীতের এক ত্রিসন্ধ্যায় সেই পানশালার সামনে অস্পষ্ট এক দৃশ্য দেখে আমি হতবাক! সেই দৃশ্যটি আরেকবার দেখার আশায় মাঝে মাঝে ঐ পানশালায় যাই। পানের সাথে সাথে কেউ খেলাধূলা করে, কেউ টিভিতে বেইজ বল, কেউ ঘোড়দৌড়, কেউবা কার রেইস দেখে। কিন্তু জেসিকা তার ব্যতিক্রম। প্রতি সন্ধ্যায় কাঁধে একটা ব্যাগ, হাতে কাগজ কলম নিয়ে বারে এসে একটা ড্রিংক্সের অর্ডার দিয়ে একেবার কোণায় গিয়ে বসে। গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে কি লেখালেখি করে। নিজ থেকেই একদিন আলাপ জমাতে চেষ্টা করি, আমাকে সে জিজ্ঞেস করে আর ইউ ফ্রম ইন্ডিয়া? আমি হ্যাঁ না কিছুই বলি না, সে বলে আই থিংক ইউ আর ফ্রম বেংলাদেশ। আমি বলি ঠিকই তাহলে ধরতে পেরেছো। জেসিকা বলে এ এলাকায় অনেক বাঙ্গালি থাকেন, ২/১ জনের সাথে আলাপ হয়েছে। তাছাড়া আমার দাদু তোমাদের ওখানে ছিলেন দীর্ঘদিন, তার কাছ থেকে জেনেছি, ১৯৭০ সালের বন্যায় তোমাদের ওখানে অনেক লোক মারা গেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা, বাঙ্গালীর আত্নত্যাগ, বীরত্বের কথা আজো তিনি বলেন। তোমাদের আর্সেনিক সমস্যার কি সমাধান হয়েছে? জেসিকা আমায় জিজ্ঞেস করে। ৯০ এর গণঅভ্যূথান, রানা প্লাজা ট্র্যজেডি সব কিছুই যেন তার নখোদর্পনে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি তুমি বাংলাদেশ সম্বন্ধে এত খবর রাখো? সে বলে, আমি একটা পত্রিকায় কাজ করি, তাই খোঁজতো রাখতেই হয়। প্রায়ই জেসিকার সাথে দেখা হয়, হাই. হ্যালো। পরিচয়ের পর কেটে গেছে কয়েক মাস। একদিন রাতে টিভিতে স্থানীয় নিউজ দেখছি, হঠাৎ চোখটা টিভি স্কিনে আটকে গেল, খুব পরিচিত মুখ, চেনাচেনা লাগছে, জেসিকা! নামটাও পরিচিত। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। নিউজ কাষ্টার বলে যাচ্ছেন, জেসিকা একজন অনুসন্ধ্যানী সাংবাদিক ছিলেন, বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারী করে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন, “ইনডেক্স ফিঙ্গার” নামে একটি ডকুমেন্টারী ফিল্মের কাজ ছিল প্রায় শেষ পর্যায়ে….! খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভাবি জেসিকাতো আমার কেউ না তবে কেন তার জন্যে মনটা কাঁদে। দিন যায়, মাস যায়। আমি মাঝে মাঝে সেই পানশালায় যাই, একেবারের কোণার চেয়ারটায় কেউ আর বসে না যেখানটায় জেসিকা বসতেন।। স্থানীয় একটি পত্রিকায় হঠাৎ চোখ পড়লো, জেসিকার অসমাপ্ত ডকুমেন্টারী ফিল্মটা তার বয়ফ্রেন্ড শেষ করেছেন এবং আগামী রোববার স্থানীয় একটি থিয়েটার হলে ছবিটি প্রদর্শিত হবে। বন্ধু বিজয় ধর রনি ও মিলটন হাসানকে নিয়ে ছবিটি দেখতে গেলাম। শুরুতেই সারা পর্দা জুড়ে বিশাল একটি তর্জনী, সাথে খুব পরিচিত আবহ সঙ্গীত। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭২, ১৯৭৫… ২০১৫। ৫২ মিনিটের ফিল্মে বাঙ্গালির আন্দোলন, সংগ্রাম, আত্নত্যাগ, চাওয়া পাওয়া, স্বপ্নভঙ্গের বাস্তব চিত্র কত নিঁখুত ভাবে যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা ছবিটা না দেখলে বোঝা যাবে না।ছবি শেষে তিনজন যখন হল থেকে বের হলাম, আমরা সবাই নির্বাক। একজন অবাঙ্গালী হয়ে জেসিকা যা করলেন তাতে সত্যি আমি অভিভূত। ছবিটা আমাদের সবার দেখা উচিত।আমার চোখে ভেসে উঠে পানশালায় গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে জেসিকা ডুবে যেতেন বাংলা আর বাঙ্গালিত্বে। প্রণমি তোমায় জেসিকা।