ছুটির দিনে দুপুরের খাবারের পর একটা ভাতঘুমের অভ্যাস দীর্ঘদিনের। তারই প্রস্তুতি যখন করছি এমন সময় ফোন।
ফোনকল ১
অপর প্রান্তে নারী কণ্ঠস্বর, তাও পরিচিত। দাদা, আপনার ভাইয়াকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বলেন কি ভাবী? কয়দিন হলো?
আরে কয়দিন না, আজ দুপুরে ১ টার দিকে ভাত খেয়ে ঘুমাতে যাচ্ছিলো, আমি বললাম বাসার সামনের দোকান থেকে পান নিয়ে আসো। সেই যে গেল আর খবর নেই। পরনে লুঙ্গি, পাঞ্জাবী। ফোন দিলাম, ধরে না।
চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি খোঁজ নিচ্ছি।ভাইকে ফোন দিতেই তিনি ধরলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কোথায়? আপনাকে খোঁজে খোঁজে আমরা যে হয়রান, ভাবির তো মূর্ছা যাবার উপক্রম।
আরে ভাই, এসেছিলাম পান কিনতে, দোকানের পাশের বিল্ডিংয়ে চলছে গুণীজনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। বলটু আমাকে নিয়ে স্টেজে তুলে বলে আমি নাকি কমিউনিটি সেবায় বিশেষ অবদান রেখেছি তার জন্য পুরস্কৃত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি আবার কমুউনিটির জন্য কি করলাম? বলটু বললো, আমি যে প্রবাসে এসেও পানের ব্যবহার ধরে রেখেছি এটার জন্য পুরস্কার, পান নাকি বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অঙ্গ।
ভাবিকে ফোন দিয়ে বললাম, ভাবী চিন্তার কোন কারণ নেই ভাই পান, পানের সাথে পানের পুরষ্কার নিয়ে বাড়ী ফিরবেন, তবে কখন ফিরবেন বলতে পারছি না।
ফোনকল ২
ফোন বেজে চলেছে, আমি রিসিভারটা তুলে বললাম হ্যালো, কোন জবাব নেই, তবে ভদ্রমহিলা কাকে যেন শাসাচ্ছেন সেটা শুনা যাচ্ছে আর শাসানোর যে ধরন সেটা শুনে খুব ভালোভাবে বুঝা যাচ্ছে যাকে শাসানো হচ্ছে তিনি যে তার নিরীহ প্রকৃতির স্বামী।
দাদাকে একটু দেয়া যাবে
হে দাদা বলছি
(অভিযোগের সুরে) দেখেনতো আপনার ভাই কোন বিষয়েই কোন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করে না তাই মানুষ লাই পেয়ে মাথায় ওঠে যা খুশী তা করে, বলে। এভাবে কি সংসার করা যায় বলুন।
কি হয়েছে বলুন।
আরে ভাই ২০০ ডলার খরচ করে মাথার চুল কালার করেছি। ছিল কালো এখন করেছি সাদা, পাশের বাসার ভাবী এটা দেখে জ্বলে পুড়ে আমাকে খালাম্মা বলে ডাকে। আচ্ছা বলেন তো আমার বয়স কি তেমন হয়েছে।
আরে না না, আপনার আর কি বয়স হয়েছে, এখনো আপনাকে দেখতে টিন এজার মনে হয়। দেখতে সিনেমার নায়িকার মত লাগে।
কিন্তু আপনার ভাই নিজেরে বুড়া মনে করে সাথে সাথে আমাকেও বুড়ী মনে করে।
না না তা হবে কেন।
তা না হলে এসবের প্রতিবাদ করে না কেন। কয়দিন পর ঔ মহিলা আমাকে দাদি বলে ডাকবে। আপনার ভাইকে বলেন এর একটা ব্যবস্থা করতে নতুবা আজ ওর একদিন নয় আমার একদিন বলে ফোনটা স্বামীকে দিলেন।
স্বামীকে বললাম, আরে ভাই রং একটা ফোন নাম্বারে ফোন করে সেই ভদ্রমহিলাকে একটু কথা শুনিয়ে দিন দেখবেন সব ঠিক।
ফোনকল ৩
কোন সম্ভাষণ, ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা না করেই ভাবী বলছেন আচ্ছা দাদা, ছুটির দিনে কি আপনারা সারাদিন ফেসবুক নিয়ে বসে থাকেন?
আরে না না তা হবে কেন।
এই তো দেখেন আপনার ভাই ঘুম থেকে ওঠে চা খেয়ে সেলফোন নিয়ে বসেছিলো, মাঝে একবার গোসল করে ভাত খেয়ে আবার বসেছে, ফেসবুকে রীল নাকি কি একটা আছে ওটাতে নাকি সুন্দর সুন্দর নারীদের ভিডিও, ছবি দেখায় ও সেগুলো দেখে। দেখেন আমাদের বাচ্চারা বড় হচ্ছে, তারা কি ভাববে বলুন। ছুটির দিনে একটু বাজার করবে, বাসাবাড়ির কাজ করবে, সবাইকে নিয়ে একটু বাইরে যাবে এসবের কিছু না সারাদিন বিছানায় বসে সেলফোন টিপাবে। মনে হয় সংসার ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই কিন্তু বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে আর পারি না।
আমি বললাম এসবের কিছুই আপনাকে করতে হবে না, আপনিও ভাইয়ের মতো একটা সেলফোন নিয়ে আগামী ছুটির দিনে তাই করবেন, রান্নাবান্না বন্ধ, খাওয়া দাওয়া বন্ধ, দেখবেন সব ঠিক।
ফোনকল ৪
দাদা বড় বিপদের মধ্যে আছি কখন কি হয়।
আরে কি হয়েছে সেটা আগে বলবেন তো
আমাদের দীর্ঘদিনের পুরান ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে চলে যাবার পর নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। ভদ্রলোক খুবই অমায়িক, ভদ্র, নিরীহ প্রকৃতির কিন্তু ভদ্রমহিলা যেন একটু অন্য রকম।
অন্য রকম মানে
মানে আমার কাছে একটু সন্দেহ সন্দেহ লাগে আর কি
সন্দেহ লাগে, আরে কীসের সন্দেহ।
না মানে…
না মানে আবার কি, খোলাসা করে বলেন
আমি যখন বাসায় থাকি না তখন নানান অজুহাতে আমাদের বাসায় আসে আর আপনার ভাইয়ের সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলে। সময়ে অসময়ে ফোন করে।
তাদের সমস্যা হলে তো মালিককে ফোন করবেই।
আরে দিনের মধ্যে ৫ বার ৬ বার ফোন করে, রাতে ঘুমিয়ে গেলে ফোন করে।
রাতে ফোন করে সেটা ভাল লক্ষণ না।
আরে শুধু রাতে ফোন না, গভীর রাতেও ফোন করে, আর আমার স্বামী ফোন ধরে ফিটির ফিটির কথা বলে।
অবস্থা তো সুবিধার মনে হচ্ছে না।
এখন কি করতে হবে বলুন।
আপাতত আপনি একটা কাজ করতে পারেন, আপনিও ভদ্রমহিলার স্বামীর সাথে দেখা করেন, কথা বলেন, মাঝে মাঝে ফোন করেন, দেখেন কি হয়। যদি কাজ হয় জানাবেন না হলেও জানাবেন।
ফোনকল ৫
দাদা বড় সমস্যার মধ্যে পড়েছি
সমস্যা থাকলে তো সমাধানও থাকবে। সমস্যা। সমাধান। এগিয়ে চলা, এইতো জীবন।
আরে দাদা আপনার হেয়ালি রাখেন। আমি সিরিয়াস।
বলেন বৌদি সমস্যা কি।
আরে আপনার দাদার নতুন একটা অসুখ হয়েছে।
অসুখ হয়েছে ডাক্তার দেখান।
আরে এ অসুখ ডাক্তার সারাতে পারবে না।
এ আবার কেমন অসুখ।
আপনি তো জানেন আপনার দাদা ভাল গান করে। এই কমিউনিটিতে তার একটা বিশেষ সম্মান আছে। কিন্তু ইদানীং তার মধ্যে সব কিছু হওয়ার একটা খায়েশ দেখা দিয়েছে।
সেটা কি রকম।
এখন সে কবিতা আবৃতি করতে চায়, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে চায়, হারমোনিয়াম বাজাতে চায় আবার তবলাও বাজাতে চায়, গিটার বাজাতে চায়, সাংবাদিক হতে চায়, গল্প লিখতে চায়, প্রাবন্ধিক হতে চায়। তার এই ভীমরতির দরুন মানুষের যে তার প্রতি একটা শ্রদ্ধাভাব ছিল সেটা এখন কমতে শুরু করেছে। সেটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমি তাকে বলেছি গান নিয়ে আছো সেটা নিয়ে থাকো, সেটা সে বুঝতে চায় না। সবাইকে দিয়ে সবকিছু হয় না। যে যেটা ভাল করে তাকে সেটা নিয়ে থাকতে দাও তুমি তোমার সঙ্গীত নিয়ে থাকো। দাদা আপনি কি তাকে একটু বুঝাবেন।
তা না হয় বুঝালাম কিন্তু উনি বুঝবেন তো…।।