যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইংরেজী নববর্ষকে বরণ করেছে। গত ৩১শে ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি হ্যামট্রাম্যাক, ডেট্রয়েট, মেডিসন হাইটস, ওয়ারেন সিটির বিভিন্ন হল ও রেষ্টুরেন্টে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রবাসী বাঙালি সংগঠন নববর্ষ উদযাপন করে। অনুষ্টানে উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা এতে মুগ্ধ হন। বিনোদনের বিভিন্ন পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিল খুদে ও শিশু শিল্পীরা। ছোট ছোট নৃত্য শিল্পীদের নূপুরের রুনুঝুনু আওয়াজে মন ভরে ওঠে সকলের। স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত, কৌতুক পরিবেশন করেন। রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বালন ও কেক কাটার মাধ্যমে সবাই নববর্ষকে বরণ করেন। কোন কোন অনুষ্টানে ছিল আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র। র্যাফেল ড্রতে ছিল বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
নববর্ষকে স্বাগত জানাতে হ্যামট্রাম্যাক সিটির মদিনা ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট ৩১শে ডিসেম্বর রাতে এক অনুষ্টানের আয়োজন করেন।এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শফিক রহমান,হারান কান্তি সেন,সঞ্জয় দেব,শর্মিলা দেব,হাবিবুর রহমান রনি,মৌটুসী দাম, মাহমুদুল হক লিটু, গোলাম মোস্তফা নাদির,আবলুছ মিয়া প্রমুখ। রাত ১২টা ০১ মিনিটে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ গানটি সমবেত কন্ঠে পরিবেশন করার পর কেক কেটে বর্ষ বরণ করা হয়। সব শেষে ছিল র্যাফেল ড্র।
মৃধা বেঙ্গলি কালচারাল সেন্টারের মেডিসন হাইটসস্থ তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে ৩১শে ডিসেম্বর রাতে ইংরেজী নববর্ষ বরণ উদযাপন করা হয়েছে। এতে ছিল নৃত্য, সঙ্গীত, কৌতুকসহ বিভিন্ন পরিবেশনা। রং বেরংয়ের পোষাক পরে শিশু, কিশোর, কিশোরীরা অনুষ্টানে অংশ গ্রহণ করে। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেক কাটার মাধ্যমে সবাই নববর্ষকে বরণ করেন। উপস্থিত সবাইকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়।
ওয়ারেন সিটির ‘ওয়ারেন ইটস’ নামক একটি রেষ্টুরেন্টে একদল প্রবাসী বাঙ্গালি ৩১শে ডিসেম্বর রাতে ইংরেজী নববর্ষ বরণ উপলক্ষে তাদের পরিবার, পরিজন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সমবেত হয়েছিলেন। তাদের অনুষ্টানমালায় ছিল গান, বাজনা, কেক কেটে বর্ষ বরণ ও নৈশভোজ।
ওয়ারেন সিটির নাইন মাইলের একটি হলে একদল প্রবাসী বাঙালি ৩১শে ডিসেম্বর রাতে নববর্ষ বরণ উদযাপন করে, এতে বিভিন্ন খেলা, প্রতিযোগিতা, কেক কেটে বর্ষ বরণ করা হয়। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে বর্ষ বরণ করেন।
এদিকে ১লা জানুয়ারী বিভিন্ন অনুষ্টানের মাধ্যমে ডেট্রয়েট সিটির দুর্গা মন্দির ইংরেজী নববর্ষকে বরণ করেছে। এ উপলক্ষে বাউল গান, কীর্তন, লোকগীতি পরিবেশন করেন বিভিন্ন স্থানীয় শিল্পীরা। আগত সবাইকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করা হয় বিভিন্ন স্বাদের পিঠা, পুলি, মিষ্টান্ন, ব্যতিক্রমধর্মী রকমারী ব্যঞ্জন দিয়ে। মন্দিরের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিপেশ সুত্রধর জানান, আমরা এবার একটু ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্টানের আয়োজন করেছি, এতে মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। একি ধরণের গতবাধা অনুষ্টান মানুষ আর পছন্দ করে না তাই এবছর আমরা তিনটি নতুন অনুষ্টান সংযোজন করেছি। ভক্তরা এটা পছন্দ করেছেন। ভক্তদের উপন্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ থেকে ৬ বছর আগেও মিশিগান প্রবাসী বাঙালিরা ইংরেজী নববর্ষকে বরণ করতেন বাসা বাড়ীতে নিজ নিজ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে সীমিত আকারে। এটাকে প্রাতিষ্টানিক রুপ দেয় মিশিগানের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সিম্ফনি ক্লাব। ‘ভিন্নতার খোঁজে একদল অভিযাত্রী’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৯ সালের ইংরেজী নববর্ষের প্রথম প্রহরে এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। তারা এই দিনে ব্যাপক কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রদীপ প্রজ্বালন ও কেক কাটার মাধ্যমে নববর্ষকে বরণ করেন। সিম্ফনি ক্লাবের সভাপতি ও কমুউনিটি নেতা বিজিত ধর মনি জানান, ২০১৯ সালে প্রথমে আমরা কয়েকজন মিলে ব্যাপক কর্মসূচীর মাধ্যমে বিগ বাজেটে ইংরেজী নববর্ষকে বরণ করার প্রাতিষ্টানিক রুপটা দেই। এর আগেও এখানে বর্ষ বরণের অনুষ্টান হয়েছে কিন্তু সেগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ও সীমিত আকারে। আমাদের এ অনুষ্টান সুধী মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। শুধু বর্ষ বরণ নয় আমরাই প্রথম মিশিগানে ‘বর্ষা মঙ্গল’ অনুষ্টান করি।এটা দেশ ও প্রবাসের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পার্থ সারথী দেব ধ্রুব বর্তমান প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, আমরা সব সময়ই কমুউনিটিকে নতুন কিছু উপহার দিতে চাই। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি ঐতিহ্য তুলে ধরতে চাই। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ভান্ডার বিশাল। সেগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে আমাদের। আগামীতে আপনাদের কোন নতুন চিন্তা ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে দেব জানান, তা আগামী দিনগুলিতেই দেখতে পাবেন আমরা অনুকরণ নয় অনুরণনে বিশ্বাসী।