দেশে যারা সাংবাদিকতা বা লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন প্রবাসে এসেও তারা বিভিন্ন সংবাদপত্রে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে অভ্যাসটা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। প্রবাসের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটা যদিও দেশের তুলনায় অনেক ছোট। মূলত নিজ কমুউনিটির বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকান্ড, বিভিন্ন জাতীয় দিবস সমূহ, প্রতিথযশা কবি সাহিত্যিকদের জন্মজয়ন্তী, মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্টানাদির সংবাদ লেখাই প্রধান। এসব সংবাদ লেখা ও পত্রিকায় প্রকাশের আগে ও পরে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মূখিন হতে হয় তার কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
সবচেয়ে বেশী যে অভিযোগ আসে সেটা হচ্ছে, কোন সংগঠনের সংবাদ প্রকাশের পর সংগঠনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির নেতার ফোনে সাংবাদিককে প্রশ্ন নিউজে আমার নাম নেই কেন? সাধারণত কোন সংগঠনের সংবাদে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রবীণ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ও বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে। কোন কোন অনুষ্টানে আলোচক বা বক্তব্য প্রদানকারীর সংখ্যা ত্রিশের কোঠা পেরিয়ে যায়। স্বাভাবিক কারণেই সবার নাম দেয়া সম্ভব হয় না।
পরের অভিযোগ নিউজ যেটা ছাঁপা হয়েছে তাতে আমার ছবি নেই কেন? ছবি যখন তোলা হয় সাধারণত মূল আলোচক বা সভাপতির বক্তব্যের সময় আশে পাশে যারা থাকেন তাদের ছবিই তোলা ও ছাপানো হয়।
সংবাদ এতো সংক্ষিপ্ত কেন? সাংবাদিকরা ঘটনা যেটুকু ঘটে বা অনুষ্টানে যা যা হয় তার খবরই পাঠান, হয়ত পত্রিকায় তাই ছাপানোর জন্য কম্পোজ করা হয় কিন্তু দেখা গেল পত্রিকা প্রেসে যাবার আগে এর চেয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এসেছে তাই সংবাদ সংক্ষিপ্ত করে ঐ জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি দেয়া হয়েছে।
সংবাদে আমার নাম নেই কেন? এই প্রশ্নটা যখন আমাকে কেউ করেন তখন আমার দেশে সাংবাদিকতা করা কালীন একটা ঘটনা মনে পড়ে। এক লোক দলের তৃতীয় সারির পাতিনেতা, প্রায়শই প্রশ্ন করতেন সংবাদে অনেকের নাম দেন কিন্তু আমার নাম নেই কেন? আমি তার প্রশ্ন যন্ত্রণায় কাতর হয়ে এরপর থেকে কোন রাজনৈতিক দলের কোন সভার নিউজ হলে লিখতাম বক্তব্য রাখেন সভাপতি অমুক, সাধারণ সম্পাদক অমুক, প্রমুখ। এই ‘প্রমুখ’ নাম দেখে ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন প্রমুখ কিভাবে সব সভাতে বক্তব্য রাখেন। আমি প্রতিটি সভায় উপস্থিত থেকে দেখেছি প্রমুখ নামে কোন ব্যক্তি বক্তব্য রাখেননি। একি ব্যক্তিতো তিন মতধারার তিনটি রাজনৈতিক দল করতে পারেন না। আপনি সব জায়গাতেই দেখেছি প্রমুখ’কে দিয়ে বক্তব্য দিয়ে দেন। উনি হয়ত আপনার নিকটজন। সবখানেই স্বজনপ্রীতি ভাই। আমি বললাম ভাই এই প্রমুখের মধ্যে আপনিও আছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কিভাবে? আমি বললাম সেটা না হয় অন্যদিন বুঝাবো।
সবচেয়ে বেশী যে সমস্যাটা হয় সেটা হচ্ছে নাম বা পদবী বিভ্রাট। একবার এক নিউজে এক ভদ্রলোকের নাম লিখলাম বক্তব্য রেখেছেন অমুক রায়। ভদ্রলোকতো আমার উপর মহাক্ষেপা। বললেন আপনি এতদিন আমরিকা থাকেন আপনি জানেন না ইংরেজীতে রায় হয় না। হয় রয়(Roy) নতুবা রে (Ray)। আরেকবার এক নিউজে লিখলাম সঙ্গীত পরিবেশন করেন অমুক আহমদ। সেই আহমেদ ফোনে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন নাম লেখার আগে জিজ্ঞাসা করবেন না আমি কোন আহমেদ। আহমদ নাকি আহমেদ নাকি আহম্মদ। ঠিক এমনটি হয়েছিল এক কীর্তনের নিউজ করায়। আমি লিখেছিলাম কীর্তন পরিবেশন করেন অমুক দাশ। সেই কীর্তনীয়া আমাকে ফোনে বললেন, নামটা পর্যন্ত শুদ্ধ করে লেখতে পারেন না আবার সাংবাদিকতা করেন। আমি বললাম কেন কি হয়েছে। তিনি বললেন, দাশ বানান দাস হবে। এরকম আরো আছে যেমন হোসেন, হোসেইন, হোসাইন, হাসান। এছাড়াও মিয়া হবে নাকি মিঞা। রহমান নাকি রাহমান নাকি রেহমান।
এতো গেল নামের ব্যাপার। এরপর ভূল নাম ঠিক করে দিতে হবে। একটা নিউজ প্রেসে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ জন মানুষ দেখে থাকেন। এখন বললেইতো আর চট করে বদলানো যাবে না। সংশ্লিষ্ট বিভাগের যিনি এ বিষয়টা দেখেন তার মাধ্যমে সেটা করতে হবে। দেখা গেল ঐদিন ঐ ব্যক্তির অফডে। অন লাইন পত্রিকায় হয়তো স্বল্প সময়ে পরিবর্তন করে দেয়া যায় কিন্তু ছাঁপা কাগজ হলেতো সময়সাপেক্ষ। এরপরও হয়তো ঠিক করে দিলেন তারপরও অভিযোগের পর অভিযোগ। নিউজ যখন দিলেন বড় করে আমার নাম ভূল করে দিলেন দুনিয়ার মানুষ আমার নামটা ভূল করে জানলো আর সংশোধনী যখন দিলেন ছোট্ট করে যা কারো চোখেই পড়বে না।
এছাড়াও আরো অনেক ব্যাপার আছে যেমন নিউজ কোন পাতায় যাবে, কতটুকু জায়গা দিবেন, কোন ছবি দিবেন কয়টা দিবেন এসব ব্যাপারও সাংবাদিকদের কেউ কেউ বলে দেন।
এ ব্যাপারে মিশিগানে ব্যতিক্রম হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশান অব মিশিগান। তারা তাদের প্রতিটি অনুষ্টানের পর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। এতে ভূলের সম্ভাবনা থাকে না। তাদের এই এগিয়ে থাকাকে সাধুবাদ।
বিশেষ প্রতিনিধি : মিশিগান দর্পণ