মিশিগানের ওয়ারেন সিটির একটি সামরিক ঘাঁটিতে গত ১৩মে মঙ্গলবার একটি পরিকল্পিত হামলার ঘটনা রুখে দিয়েছে এফবিআই। এ ব্যাপারে আম্মার আব্দুলমাজিদ-মোহাম্মদ সাইদের বিরুদ্ধে একটি বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনকে বস্তুগত সহায়তা প্রদানের চেষ্টা এবং একটি ধ্বংসাত্মক ডিভাইস সম্পর্কিত তথ্য বিতরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদপত্র সুত্রে এ খবর জানা গেছে। আদালতের নথি অনুসারে, সাইদ ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড আল-শাম (আইএসআইএস) এর পক্ষে ওয়ারেনের ডেট্রয়েট আর্সেনালে মার্কিন সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক অটোমোটিভ অ্যান্ড আর্মামেন্টস কমান্ড (টিএসিওএম) এ গণহত্যা চালানোর তার পরিকল্পনার কথা দুজন গোপন এফবিআই এজেন্টকে জানিয়েছিলেন।
দোষী সাব্যস্ত হলে, প্রতিটি অভিযোগের জন্য তাকে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। প্রাথমিক শুনানির জন্য তাকে আগামী ২৮ মে, ২০২৫ তারিখে আদালতে তোলা হবে জানা গেছে।
জানা গেছে মেলভিন্ডেলের ১৯ বছর বয়সী সাইদ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মিশিগান আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মিশিগান ন্যাশনাল গার্ডের পাবলিক এফেয়ার্স কর্মকর্তার মতে, প্রাথমিক প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে সাইদকে অনিচ্ছাকৃতভাবে(involuntarily)অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।তিনি আন্ডারকভার এফবিআই এজেন্টদের বলেছিলেন যে তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে দেড় বছর কাটিয়েছেন কারণ তিনি “প্রশিক্ষণের জন্য এটি করেছিলেন। আমি প্রশিক্ষণ নিতে চেয়েছিলাম যাতে আমি জানতে পারি আমি কী করছি, আমি জানি তারা কীভাবে চিন্তা করে এবং কীভাবে তারা কাজ করে, আপনি জানেন। আমি কোথাও যাওয়ার আগে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে চেয়েছিলাম। আমি সম্পূর্ণরূপে নিবেদিতপ্রাণ…”। ২০২৪ সালের জুন মাসে, আদালতের নথিতে দাবি করা হয়েছিল যে সাইদ একজন গোপন ফেডারেল এজেন্টকে বলেছিলেন যে তিনি একজন সহযোগী আইএসআইএস সমর্থক। অডিও বা ভিডিও রেকর্ড করা একাধিক কথোপকথনের সময় সাইদ জিহাদে জড়িত হওয়ার তার ইচ্ছার কথা বর্ণনা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে, হয় বিদেশে আইসিস-অধিকৃত অঞ্চলে ভ্রমণ করে অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালিয়ে তা তিনি করবেন। তল্লাশির সময়, এফবিআই এজেন্টরা সাইদ এবং অন্য একজন ব্যবহারকারীর মধ্যে আরবি ভাষায় ফেসবুক বার্তা খুঁজে পান। জানা গেছে, সাঈদ ব্যবহারকারীকে বলেছিলেন, “আমি জিহাদে যেতে চাই,” এবং তারা উত্তরে বলেছিলেন, “টেলিগ্রামে আমার সাথে কথা বলুন।” এজেন্টরা তখন জানতে পারেন যে সাইদ টেলিগ্রামের একাধিক চ্যানেলের সদস্য ছিলেন যেখানে আইসিসের পতাকা সম্বলিত ভিডিও এবং ছবি ছিল।
২০২৪ সালের আগস্টে, আন্ডারকভার এজেন্ট সাইদের সাথে একজনকে পরিচয় করিয়ে দেয়, নিজেকে তাদের সহযোগী বলে দাবি করে, যাকে আসলে হলফনামায় এফবিআইয়ের গোপনীয় লোক(Source.)হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এরপর সাইদ ও আন্ডারকভার এজেন্টদের মধ্যে একাধিকবার টেক্স্ট ও আলাপ হয়েছে।
সাইদ সেই সময় একটি রাইফেল কেনার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তখন তার বয়স ১৭ বছর হওয়ায় তিনি তা করতে পারেননি।
২০২৫ সালের ৮ মে এক বৈঠকে সাইদ পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ট্যাঙ্ক অটোমোটিভ অ্যান্ড আর্মামেন্টস কমান্ড TACOM-এর উপর আরও একবার নজরদারি করা উচিত, কারণ আক্রমণটি মার্কিন মাটিতে হবে, তাই তাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। সাইদ ঠিক করেন যে আক্রমণের দিনটি হবে ১৩ মে, ২০২৫, সকাল ১০:৩০ টার দিকে। এরপর সাইদ TACOM স্থাপনার উপর দিয়ে তার ড্রোন উড়িয়ে আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দেখিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, হামলার দিন দ্বিতীয় আন্ডারকভার এজেন্টের সামরিক পোশাক পরিধান করা উচিত যাতে তারা ঘাঁটির ভেতরে আলাদাভাবে দেখা না যায়। প্রথম আন্ডারকভার এজেন্ট এবং সাইদ পরিকল্পিত আক্রমণের দিন সকাল ৯:৩০ টায় ডিয়ারবর্নের পার্কে দেখা করতে সম্মত হন।নির্ধারিত হামলার দিন, সকাল ৯:৩০টায় আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সার্ভিল্যান্সে সাইদকে তার বাড়িতে দেখা যায়, তিনি সম্পূর্ণ কালো পোশাক পরেছিলেন। তিনি তার গাড়িতে উঠে ডিয়ারবর্নের পার্কে যান। পার্কে পৌঁছানোর পর, তিনি প্রথম আন্ডারকভার এজেন্টের গাড়িতে উঠেন। তিনি তার ড্রোনটিও সাথে করে নিয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ওয়ারেনের ডেট্রয়েট আর্সেনালে মার্কিন সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক অটোমোটিভ অ্যান্ড আর্মামেন্টস কমান্ড (TACOM) দিকে গাড়ি চালিয়ে যায়, এবং TACOM-এর কাছে পৌঁছানোর প্রায় দশ মিনিট আগে, প্রথম গোপন এজেন্ট দ্বিতীয় গোপন এজেন্টকে ফোন করে জানায় যে তারা শীঘ্রই পৌঁছাবে। যখন তারা সেখানে পৌঁছায় এবং সাইদ TACOM-এর কাছে তার ড্রোনটি উড়ায়, তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে গ্রেপ্তার করে।