১২:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
স্থানীয় সংবাদ

মিশিগানে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমানের গণসংবর্ধনা, জাতির উদ্দেশ্যে ৪১টি অঙ্গীকার

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক শহরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান মিশিগান প্রবাসী বাঙালি কর্তৃক  আয়োজিত এক গণসংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন। গতকাল ২৫ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় ‘বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি অব মিশিগানে’র উদ্যোগে শহরের ‘গেইটস অব কলম্বাস’ হলে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতে তিনি বক্তব্য রাখেন। এতে দল, মত নির্বিশেষে সকল পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য কিছু করতে, তাদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেছি, আমরা প্রত্যেকটি শহীদ পরিবারের কাছে গিয়েছি, চেষ্টা করেছি তাদেরে সামান্য সান্তনা দিতে, তাদের দুঃখের অংশীদার হতে, যাদের সহায় সম্বল নেই তাদের পরিবারের, সন্তানদের দায়িত্ব নিতে, সন্তানরা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামী নেবে, আমরা যা খাবো তারাও তাই খাবে, আমাদের সন্তানদের মতো তাদের সন্তানরাও লেখাপড়া করে মানুষ হবে। আমাদের এই সিদ্ধান্তে সমাজের অনেক বিবেকবান, হৃদয়বান মানুষ এগিয়ে এসে একাত্মতা প্রকাশ করে আমাদের অংশীদার হয়েছেন। বক্তব্যের এ পর্যায়ে অনেকে শ্লোগান দেন “শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না” তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, শ্লোগান দিও নারে ভাই, আমি গরীব মানুষ আসছি, এখানে অনেক লোক কষ্ট করে আসছেন, দুটো কথা বলে চলে যাবো। তিনি আরো বলেন, অনেক শহীদ ও যারা পঙ্গু হয়েছেন তাদের লাল রক্তের বিনিময়ে আমি আজ এখানে আসতে পেরেছি, তাদের জন্য দেশের মানুষ আজ স্বস্থির শ্বাস নিতে পারছেন। অনেকে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, ভাই আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখি না। আমরা ক্ষমতাকে ভয় পাই, ক্ষমতা মানুষকে বেহায়া ও বেপোরোয়া করে দেয়। আমরা ক্ষমতাবান হতে চাই না, ক্ষমতাবান থাকবেন আমাদের আল্লাহ। সমস্ত ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। আমরা তাহলে কি চাই, আমরা জাতির একটু সেবা করতে চাই, আল্লার ইচ্ছায় ও মানুষের ভালবাসার বরকতে এদেশের মানুষের সেবা করার জন্য যদি নির্বাচিত করেন তাহলে এ জাতির প্রতি আমাদের কিছু কমিটম্যান্ট আছে, আমরা যদি ক্ষমতায় রা গিয়ে বিরোধী দলে থাকি তাও আমাদের কিছু কমিটম্যান্ট আছে, এ কমিটম্যান্ট বদলাবে না, অবস্থান আমাদের যাই হোক অঙ্গীকার তার জায়গায় থাকবে। আমাদের প্রথম অঙ্গীকার হচ্ছে, জাতির ভাঙ্গাচোরা, বিধ্বস্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় হাত দেব, যে জাতির মেরুদন্ড ঠিক নাই সে জাতি কখনো মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না। তারজন্য আগে মেরুদন্ড ঠিক করতে হবে। শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড, সৃষ্টিকর্তাকে তোমাকে চিনতে হবে, এটা বুঝতে হবে, এর আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থা সাজাতে হবে, সায়েন্স ও টেকনলজী সবকিছু শিক্ষা কার্যক্রমে সন্নিবেশিত করবো। এ শিক্ষায় সন্তানরা নৈতিকবোধ সম্পন্ন মানুষ হবে, অন্যদিকে দক্ষতা সম্পন্ন দেশ গড়ার কারিগর হবে। এতে দেশে বেকারত্ব থাকবে না। এই দেশে জাতপাত, ধর্মের কোন ব্যবধান থাকবে না। মেধার ভিত্তিতে কাজ দেয়া হবে। আমাদের দ্বিতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে  দুর্নীতি দমন। দেশে দুর্নীতি এখন চরম আকার ধারণ করেছে, আমরা এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমরা দুর্নীতির শিকড় কেটে ফেলবো ইনশাল্লাহ। এই যুদ্ধে আমরা আল্লাহর সাহায্য ও মদদ চাই, আপনাদেরকেও আমরা পাশে চাই। আমাদের তৃতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে ন্যায় বিচার।  সমাজের কোথাও এখন ন্যায় বিচার নাই, নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রীম কোর্ট, সব জায়গায় অসৎরা বসে আছে, কিছু ভাল মানুষ থাকলেও তারা বড় কষ্টে আছে, তাদেরকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে, আমরা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের চতুর্থ অঙ্গীকার হচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তি, দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, ওটাকে ঠিক করতে হবে। যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে বসাতে হবে। আমরা সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, প্রভুত্ব নয়, দাদাগিরি বা বড়ভাইগিরি মেনে নেবো না। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে থাকতে চাই। দোয়া করবেন আমরা যেন আমাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারি। আমাদের ৪১টি অঙ্গীকার আছে। আমরা আপনাদের দোয়া চাই, সমালোচনা চাই, পরামর্শ চাই, সহযোগিতা চাই। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের ভূল হলে সমালোচনা করবেন, সত্যকে তুলে ধরবেন, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলবেন। সমালোচনা না করলে আমরা কিভাবে বুঝবো যে আমরা ভূল করছি। তিনি মিশিগান প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন দাবীর প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন। দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবার দোয়া কামনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে তিনি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

শেলবি টাউনশিপের জোড়া খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার

স্থানীয় সংবাদ

মিশিগানে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমানের গণসংবর্ধনা, জাতির উদ্দেশ্যে ৪১টি অঙ্গীকার

আপডেট টাইম : ০৭:২৯:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক শহরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান মিশিগান প্রবাসী বাঙালি কর্তৃক  আয়োজিত এক গণসংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন। গতকাল ২৫ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় ‘বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি অব মিশিগানে’র উদ্যোগে শহরের ‘গেইটস অব কলম্বাস’ হলে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতে তিনি বক্তব্য রাখেন। এতে দল, মত নির্বিশেষে সকল পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য কিছু করতে, তাদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেছি, আমরা প্রত্যেকটি শহীদ পরিবারের কাছে গিয়েছি, চেষ্টা করেছি তাদেরে সামান্য সান্তনা দিতে, তাদের দুঃখের অংশীদার হতে, যাদের সহায় সম্বল নেই তাদের পরিবারের, সন্তানদের দায়িত্ব নিতে, সন্তানরা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামী নেবে, আমরা যা খাবো তারাও তাই খাবে, আমাদের সন্তানদের মতো তাদের সন্তানরাও লেখাপড়া করে মানুষ হবে। আমাদের এই সিদ্ধান্তে সমাজের অনেক বিবেকবান, হৃদয়বান মানুষ এগিয়ে এসে একাত্মতা প্রকাশ করে আমাদের অংশীদার হয়েছেন। বক্তব্যের এ পর্যায়ে অনেকে শ্লোগান দেন “শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না” তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, শ্লোগান দিও নারে ভাই, আমি গরীব মানুষ আসছি, এখানে অনেক লোক কষ্ট করে আসছেন, দুটো কথা বলে চলে যাবো। তিনি আরো বলেন, অনেক শহীদ ও যারা পঙ্গু হয়েছেন তাদের লাল রক্তের বিনিময়ে আমি আজ এখানে আসতে পেরেছি, তাদের জন্য দেশের মানুষ আজ স্বস্থির শ্বাস নিতে পারছেন। অনেকে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, ভাই আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখি না। আমরা ক্ষমতাকে ভয় পাই, ক্ষমতা মানুষকে বেহায়া ও বেপোরোয়া করে দেয়। আমরা ক্ষমতাবান হতে চাই না, ক্ষমতাবান থাকবেন আমাদের আল্লাহ। সমস্ত ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। আমরা তাহলে কি চাই, আমরা জাতির একটু সেবা করতে চাই, আল্লার ইচ্ছায় ও মানুষের ভালবাসার বরকতে এদেশের মানুষের সেবা করার জন্য যদি নির্বাচিত করেন তাহলে এ জাতির প্রতি আমাদের কিছু কমিটম্যান্ট আছে, আমরা যদি ক্ষমতায় রা গিয়ে বিরোধী দলে থাকি তাও আমাদের কিছু কমিটম্যান্ট আছে, এ কমিটম্যান্ট বদলাবে না, অবস্থান আমাদের যাই হোক অঙ্গীকার তার জায়গায় থাকবে। আমাদের প্রথম অঙ্গীকার হচ্ছে, জাতির ভাঙ্গাচোরা, বিধ্বস্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় হাত দেব, যে জাতির মেরুদন্ড ঠিক নাই সে জাতি কখনো মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না। তারজন্য আগে মেরুদন্ড ঠিক করতে হবে। শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড, সৃষ্টিকর্তাকে তোমাকে চিনতে হবে, এটা বুঝতে হবে, এর আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থা সাজাতে হবে, সায়েন্স ও টেকনলজী সবকিছু শিক্ষা কার্যক্রমে সন্নিবেশিত করবো। এ শিক্ষায় সন্তানরা নৈতিকবোধ সম্পন্ন মানুষ হবে, অন্যদিকে দক্ষতা সম্পন্ন দেশ গড়ার কারিগর হবে। এতে দেশে বেকারত্ব থাকবে না। এই দেশে জাতপাত, ধর্মের কোন ব্যবধান থাকবে না। মেধার ভিত্তিতে কাজ দেয়া হবে। আমাদের দ্বিতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে  দুর্নীতি দমন। দেশে দুর্নীতি এখন চরম আকার ধারণ করেছে, আমরা এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমরা দুর্নীতির শিকড় কেটে ফেলবো ইনশাল্লাহ। এই যুদ্ধে আমরা আল্লাহর সাহায্য ও মদদ চাই, আপনাদেরকেও আমরা পাশে চাই। আমাদের তৃতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে ন্যায় বিচার।  সমাজের কোথাও এখন ন্যায় বিচার নাই, নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রীম কোর্ট, সব জায়গায় অসৎরা বসে আছে, কিছু ভাল মানুষ থাকলেও তারা বড় কষ্টে আছে, তাদেরকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে, আমরা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের চতুর্থ অঙ্গীকার হচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তি, দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, ওটাকে ঠিক করতে হবে। যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে বসাতে হবে। আমরা সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, প্রভুত্ব নয়, দাদাগিরি বা বড়ভাইগিরি মেনে নেবো না। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে থাকতে চাই। দোয়া করবেন আমরা যেন আমাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারি। আমাদের ৪১টি অঙ্গীকার আছে। আমরা আপনাদের দোয়া চাই, সমালোচনা চাই, পরামর্শ চাই, সহযোগিতা চাই। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের ভূল হলে সমালোচনা করবেন, সত্যকে তুলে ধরবেন, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলবেন। সমালোচনা না করলে আমরা কিভাবে বুঝবো যে আমরা ভূল করছি। তিনি মিশিগান প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন দাবীর প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন। দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবার দোয়া কামনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে তিনি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।